আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
খেলার মাঠ থেকে ধরে নিয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানায় তানভীর হোসেন তুর্কি নামে এক যুবককে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে সাতকানিয়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
তানভীর হোসেন তুর্কি সাতকানিয়া থানার ঢেমশা ইউনিয়নের মাইজপাড়ার মোবারক হোসেনের ছেলে। তবে পুলিশের বলছে, অস্ত্র কারবারিতে যুক্ত ছিল তুর্কি। গোপন খবরে তাঁকে ঢেমশা ইউনিয়নের মাইজপাড়া ফজুর পুকুরের উত্তরপাড়ে ধানের জমির ওপর এক ব্যক্তির কাছে অস্ত্র বিক্রির সময় আটক করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে একটি দেশীয় অস্ত্র ও চার রাউন্ড কার্তুজ জব্দ করা হয়।
এদিকে গত রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) তুর্কির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে তাঁর পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বড় ভাই রাহাত হোসেন কপিল দাবি করেন, আটকের পর থানায় নিয়ে তুর্কিকে নির্যাতন করেছে পুলিশ। তুর্কি স্থানীয় রাজনীতিতে সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর অনুসারী। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তাঁর পক্ষে কাজ করেন। তিনি নির্বাচনে হেরে গেলে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেবের অনুসারীরা নানাভাবে তুর্কিকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ দিয়ে আটক করিয়ে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, তুর্কিকে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময়ও সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। পরে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আবার থানায় ঢোকানো হয়। এসময় আদালতে নেওয়ার জন্য বের করা হলে মুখ বিকৃত পান। আদালতে তার মুখসহ শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। আমার ছোট ভাই জানিয়েছে– থানায় তাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা মো. সামির জানিয়েছেন, তুর্কির সঙ্গে শুক্রবার দুপুরে তারা নিউমার্কেটের দ্বিতীয় তলায় খেলাঘর নামের দোকান থেকে ক্রিকেট ব্যাট, বল ও স্টাম্প কিনে এনে মাঠে খেলতে থাকেন। হঠাৎ বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ঢেমশা ইউনিয়নের উত্তর ঢেমশা এলাকার বুড়ির পুকুর-সংলগ্ন খেলার মাঠ থেকে সাদা পোশাকে কয়েকজন তুর্কিকে ধরে নিতে চাইলে বাধা দেন। কিন্তু জোর করে তারা তুর্কিকে নিয়ে বিলের দিকে এগোলে উপস্থিত নারী-পুরুষ ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করেন। এ সময় সাদা পোশাকধারীরা আগ্নেয়াস্ত্র বের করে ফাঁকা গুলি হটে। এর পর রাতে বিভিন্ন অনলাইনে অস্ত্রসহ তুর্কিকে গ্রেপ্তারের ছবি দেখে অবাক হয়েছেন বলে জানান সামির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তারা যে ওই মাঠে সবাই ক্রিকেট খেলছিলেন, তা ফেসবুকে লাইভ করেন মো. এনামুল নামে একজন। পরে এনামুল তাঁকে জানিয়েছেন– এক ব্যক্তি মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে তাঁকে দিয়ে ভিডিওটি মুছে ফেলেছেন।
এদিকে সাতকানিয়া থানার এসআই আব্দুর রহিমের করা এজাহারে বলা হয়, অস্ত্র বিক্রির সময় পুলিশ পৌঁছালে তুর্কি পালানোর চেষ্টা করেন। ধাওয়া করে তাঁকে আটক করা হয়। পরে তাঁর কোমর থেকে একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও চার রাউন্ড কার্তুজ জব্দ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থানায় অস্ত্র এবং মাদক আইনে আরও সাতটি মামলার তথ্য এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউল হক চৌধুরী বলেন, ‘মাইজপাড়া বিল থেকে একটি অস্ত্র ও চার রাউন্ড কার্তুজসহ তুর্কিকে আটক করা হয়েছে। তখন সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা সাক্ষী দিয়েছেন। তুর্কির বিরুদ্ধে থানায় আগেও সাতটি মামলা রয়েছে।’ নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আটকের সময় ধস্তাধস্তিতে সামান্য আঘাত পেয়েছেন আসামি। তাঁকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
এজাহারে সাতকানিয়া থানার মামলাগুলো হয়েছে ২০২২ সালের মে মাস থেকে গত ২০ জানুয়ারির মধ্যে। আর লোহাগাড়া থানায় মামলা হয়েছে ২০২২ সালের ১৩ মে।
তবে এসব মামলার বিষয়ে কিছু জানেনা বলে জানান তুর্কির ভাই কপিল। তিনি বলেন, ‘এসব মামলার তথ্য আমরা আগে কখনও পাইনি। আমার ছোট ভাই অস্ত্র ও মাদক কারবারে জড়িত নয়। সংসদ নির্বাচন চলাকালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এলে কয়েকটি মামলার বিষয়ে জানতে পারি। তবে পুলিশ তাকে কখনও গ্রেপ্তার করেনি।’
নতুন মামলায় এসআই আব্দুর রহিম ছাড়াও দক্ষিণ ঢেমশা হাজারখিল এলাকার আরফাতুল ইসলাম সাজ্জাদ, মোজাম্মেল হক ও মো. রুবেলকে সাক্ষী করা হয়েছে। তবে এসব সাক্ষীকে চেনেন না বলে জানান কপিল। তিনি বলেন, ‘বাইরের এসব মানুষের মাধ্যমে মামলাকে শক্ত করার চেষ্টা করেছে পুলিশ। এলাকার কেউই তাদের চেনে না।’ সাক্ষীদের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ। এমনকি এজাহারেও বাবার নাম ছাড়া সাক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো নম্বর নেই।
আজকের সারাদেশ/একে