আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
নগরের চকবাজার এলাকায় আরিফ হোসেন নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে মেরে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কাউন্সিলর নুর মোস্তাফা টিনুর অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
এ অবস্থায় গত ৮ মার্চ সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভে এসে তিনি হামলার সবিস্তার বর্ণনা দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীকে এ বিষয়ে অভিযোগ দেন তিনি।
জানা গেছে, এদিন সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কলেজের হোস্টেল গেইটের বিপরীতে তার উপর হামলা হয়। আহত আরিফ চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নেন।
ভিডিওতে আরিফ চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনুকে কুখ্যাত, চোর ও অযোগ্য কাউন্সিলর দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে এখন কথা বলা যায় না। আজকে ছাত্রলীগ বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী বলেন কিংবা প্রভাবশালী বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বলেন, কেউই তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না।
এসময় তিনি শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমি লাইভে আসার একমাত্র কারণ, আমাদের চট্টগ্রামের নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরীকে জনসম্মুখে বিচার দিতে চাই। উনার (টিনু) অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলাই কি আমার অপরাধ? চকবাজারে কি আমরা কেউ কি রাজনীতি করতে পারব না? চকবাজারে কেউ কি ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে পারবে না? ছাত্রলীগের রাজনীতি করার প্রতিদান যদি এটাই হয় তাহলে আমাদেরকে বলে দেন, আমরা মাঠ ছেড়ে চলে যাই।
তিনি আরও বলেন, পরিবারের এত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমাদের রাজনীতির মাঠে থাকার কোন প্রয়োজন নাই। আমরা রাজনীতি করতে গিয়ে যদি আমাদের এভাবে রক্ত ঝরে তাহলে আমাদের এখানে রাজনীতি করার প্রয়োজন নেই। উনি আমাদের নেতাদের অপহরণ করে নিয়ে আসবেন, উনার কাউন্সিলর অফিসে নিয়ে পেটাবেন আমরা এটার প্রতিবাদ করতে পারব না। আমরা চকবাজারে শান্তিতে থাকতে পারব না। আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক রাজনীতি করতে পারব না, আমাদেরকে যখন ইচ্ছা গাধার মত এভাবে মারবে! তাহলে আমরা রাজনীতিটা করতেছি কেন? আমি প্রিয় নেতা নওফেল ভাইকে বিচারটা দিয়ে গেলাম।
ভুক্তভোগী আরিফ বলেন, এখন বিষয়গুলো স্পষ্ট। আমাকে দুদিন আগেও হামলা করার চেষ্টা করেছে। মহসিন কলেজের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, চকবাজারের রবিউল ইসলাম রাজু, চকবাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ইভানসহ এদের ছেলেরা মিলে মারতে চাইছে। এরা সবাই নুর মোস্তফা টিনুর অনুসারী। আমাদের সাথে একটু রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। ওরা আমাকে বারবার ফোন করে ও সামনাসামনি মারধরের হুমকি দেয়। আজকে আমি চট্টগ্রাম কলেজের মসজিদে জুমার নামাজ পড়েছিলাম। নামাজের পর তারা খবর পাই আমি এখানে আছি। সন্ধ্যার পর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তিন চারটা বাইকে করে এসে ওরা আমার উপর আক্রমণ করে। আমি কল্পনাও করিনাই, অতর্কিত একটা হামলা।
হামলার সময় কেন মারছে জানতে চাইলে একজনকে বলতে শুনি, ‘তুই কেন নুরুল আজিম রনির সাথে রাজনীতি করোস’ এটা বলে মারতে থাকে। এরপর আমি রাস্তায় পড়ে যাই।
তিনি বলেন, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানের সাথে থাকা তারেককে চিহ্নিত করি। ওখানের সিসিটিভি ফুটেজ পেলে কনফার্ম হতে পারব। আমি এটা সিউর এরা সবাই কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনুর অনুসারী এবং চকবাজার ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ইভানের কিছু ছেলে, রবিউল ইসলাম রাজুর ছোট ভাই।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির সাথে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, চকবাজার ওয়ার্ডে গতকিছুদিন যা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে এ হামলার ঘটনা ঘটছে। আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য, অপরাধি যেই হোক তা দেখার বিষয় নই। এসব ফৌজদারী মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হোক।
নুর মোস্তফা টিনু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। নিজেকে যুবলীগ নেতা ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন টিনু।
মারধরের শিকার আরিফ চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নুরুল আজিম রনির অনুসারী। রনিও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
হামলা প্রসঙ্গে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, হামলার ঘটনা শুনেছি এবং ফেসবুক লাইভও আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ৩ মার্চ (রবিবার) রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেলের পূর্ব গেইটের সামনে থেকে যুবলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী মেহেদি হাসানকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠে কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনুর বিরুদ্ধে। তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় টিনুর অনুসারীরা তাকে মারধরের পর তার সাথে থাকা ১৫ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন যুবলীগ নেতা মেহেদী।
আজকের সারাদেশ/এমএইচ