আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের পিএস (ব্যক্তিগত সহকারী) হিসেবে পরিচিত মেহেদী হাসানকে ৫ লাখ টাকা দিয়েও চাকরিতে জয়েন করতে পারলেন না ইয়াহিয়া টিপু নামে এক চাকরি প্রাথী।
গতকাল (২০ মার্চ) দুপুরে চাকরিতে জয়েন করতে আসলে রেজিস্ট্রার অফিসে থেকে ইয়াহিয়া টিপুকে মারধর করে বের করে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এসময় তারা ছাত্রলীগের অনুসারীরা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নূর আহমদকে ‘ছাত্রলীগের বাইরে সকল নিয়োগ ক্যান্সেল’ বলে হুমকি দেন। এ সংশ্লিষ্ট একটি ভিডিও ক্লিপ ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। চবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ইয়াহিয়া টিপুকে ৫৫০ টাকা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে কম্পিউটার ল্যাব সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে যান সদ্য সাবেক উপাচার্য।
ইয়াহিয়া টিপু বলেন, আমার চাকুরি এপ্রুভ হয়েছে। আমি জয়েন করতে আসছিলাম রেজিস্ট্রার অফিসে। আমাকে জিজ্ঞেস করছে, আমি ছাত্রলীগ করি কি-না। ‘না’ উত্তর দেয়ায় তারা আমার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করে, আমি দিতে পারবো না বললে আমাকে মারধর করা হয়। এছাড়াও তিনি ৫ লাখ দেওয়ার বিষয়টি প্রতিবেদকের কাছে শিকার করেন। যার প্রমাণ সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এসময় ছাত্রলীগ কর্মীদের বাইরে সকল নিয়োগ ক্যান্সেল করতে রেজিস্টারকে প্রথমে শাসাতে থাকেন শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয়ের একাংশের নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম। তিনি রেজিস্ট্রারের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলতে থাকেন, ‘এখনো পিছনে বসে আছে সে। ও ছাত্রলীগ করে না। তবুও ওরে চাকরি দিছেন। ওর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ খাইছে ভিসি ম্যাম।
এরপর শাসাতে থাকেন একই গ্রুপের নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদুল আলম রিফাত। এসময় তিনি রেজিস্ট্রারকে বলতে থাকেন, ‘ছাত্রলীগের বাইরের এগুলা ক্যান্সেল। ছাত্রলীগের পোলারে নিয়োগ দিলে সমস্যা নাই। ছাত্রলীগের বাইরে যেগুলা, ওইগুলা ক্যান্সেল। ছাত্রলীগের পোলাপাইনের চাকরি লওয়ার অধিকার আছে। বাইরের পোলাপাইনের কী অধিকার? ছাত্রলীগের বাইরে সব ক্যান্সেল।’
তার সাথে সাথে এসময় উপস্থিত সকল ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীরাও রেজিস্ট্রারকে শাসাতে থাকেন। আর ভিসিকে এসব নিয়োগের ব্যাপারে বলার জন্য তাদের পক্ষে রেজিস্ট্রারকে বুঝাতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. সুমন মামুন, সাধারণ সম্পাদক মো. মনসুর আলী।
শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, একাকার গ্রুপের নেতা মইনুল ইসলাম রাসেল, ভার্সিটি এঙপ্রেসের (ভিএঙ) আল আমিন শান্ত, রায়হান ও আশিব তানিম।
এদিকে ৫ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রার দফতরের সংযুক্ত শাখার উচ্চমান সহকারী মো. মেহেদী হাসানকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নূর আহমেদ বলেন, ‘আমার অফিসে এসে তারা এরকম আচরণ করেছে। এটা আমার জন্য অপমানজনক। আমি তো তাদের নিয়োগ দিতে পারবো না। নিয়োগ দেবেন ভিসি। তবুও তারা আমার এখানে এসে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে।
আজকের সারাদেশ/এমএইচ