আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে জেলিফিশ। শুধু তা-ই নয়, বেশ কিছুদিন ধরে সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসছে মরা জেলিফিশ। অথচ মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা।
মৎস্য বিভাগ বলছে, কচ্ছপ কমে যাওয়া এবং পানি অতিরিক্ত লবণাক্ত হওয়ার কারণে প্রতিবছর এমন সময়ে জেলিফিশ ভেসে আসছে।
সমুদ্রবিজ্ঞানী ও গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, সামুদ্রিক কচ্ছপের বিচরণ ও সংখ্যা কমে যাওয়া এবং অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে ‘জেলিফিশ ব্লুম’ বা উচ্চ প্রজননহারের ঘটনা ঘটছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়া জেলিফিশ বিষাক্ত নয় জানিয়ে এগুলো রপ্তানি করার মতো অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত শনিবার কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর মোহনায় দেশের অন্যতম সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ৬ নম্বর জেটিতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক’শ মাছ ধরার ট্রলার নোঙর করে রাখা।
নুনিয়ারছড়া ৬ নম্বর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, অলস সময় কাটাচ্ছেন মাঝি সৈয়দ আহমদসহ কয়েকজন জেলে। সৈয়দ আহমদ বলেন, ‘তিন-চার দফা সাগরে গিয়ে মাছ না পেয়ে শূন্য হাতে ফিরে এসেছি। সাগরে নুইন্যা (জেলিফিশ) ছাড়া মাছই ওঠে না। অবস্থা ভালো হলে সাগরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’
জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজার মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। দুই-আড়াই মাস ধরে অধিকাংশ ট্রলার সাগরে নেমে মাছ না পেয়ে ফিরে আসছে। অল্পসল্প যা পায়, তাতে জ্বালানি খরচও উঠছে না।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. বদরুদ্দোজা বলেন, ১ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ১৫৬ টন ইলিশ, ১৩ টন রিটা, ৯ টন চাঁদা ও ১৭৩ টন মিশ্রিত মাছ আহরণ হয়েছে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ২৬৭ দশমিক ৮৮ টন ইলিশ, অন্যান্য মাছসহ মাত্র ৪৭১ টন মাছ আহরণ হয়েছে। জানুয়ারি মাসে আহরণ হয়েছিল ৪২৪ দশমিক ৫৩ টন ইলিশসহ ৭১৯ টন মাছ।
জেলিফিশের অর্থনৈতিক মূল্য
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরি) জেলিফিশ সংগ্রহ, ব্যবস্থাপনা ও বাজার সৃষ্টি নিয়ে ৬ মাস ধরে গবেষণা করছে বলে জানিয়েছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৌমিত্র চৌধুরী। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে ২২ প্রজাতির জেলিফিশ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ খাওয়ার উপযোগী। এর মধ্যে জেলিফিশের উচ্চ প্রজননের বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।
সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জানান, জেলিফিশ মূলত একধরনের অমেরুদণ্ডী প্রাণী। একটি জেলিফিশ ১ কেজি থেকে ১৪-১৫ কেজি ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিশ্বে আড়াই থেকে তিন হাজার প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে। দুর্বল প্রকৃতির এই প্রাণী সামান্য আঘাতে কিংবা জালে আটকা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায়।
এই সমুদ্রবিজ্ঞানী বলেন, বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়া জেলিফিশ বিষাক্ত না হলেও এগুলো রপ্তানি করার মতো অবকাঠামো দেশে গড়ে ওঠেনি। ফলে বাজারমূল্য না থাকায় জেলেরা মৃত জেলিফিশ সাগরে ফেলে দেন। এতে সাগরের পরিবেশ এবং জোয়ারে ভেসে এসে উপকূলের পরিবেশ নষ্ট করে।
সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর আরও বলেন, বিশ্বে জেলিফিশের ৩৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারমূল্য রয়েছে। চীন, হংকং, কোরিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত দেশ এর প্রধান বাজার। এতে অবহেলিত সামুদ্রিক এই পণ্যের স্থানীয় বাজার সৃষ্টিসহ রপ্তানি করে দেশ সুনীল অর্থনীতিতে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে।
আজকের সারাদেশ/এমএইচ