আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
কথা বলার এক পর্যায়ে চেয়ার থেকে উঠে এসে কলার ধরে চড়-থাপ্পড় দিতে থাকেন একজন। তার সঙ্গে এরই মধ্যে যোগ দেন আরও একজন। এসময় ব্যথায় কাতরানো ভুক্তভোগী যুবক কানে হাত চেপে বসে থাকেন। এতেও থামেননি তাঁরা। পরে লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে তাঁকে কার্যালয় থেকে বের করা হয়।
মারধরের শিকার ওই ব্যক্তি হচ্ছেন মনির হোসেন। তিনি সিঙ্গাপুর ব্যাংকক ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক। আর মারধরা করা ব্যক্তি দুজন হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভুসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রেজাউর করিম এবং প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার মো. লতিফুল হক কাজমী। তাদের সঙ্গে আরও একজন ব্যক্তিও ওই দোকানিকে চড় থাপ্পড় দেন। তবে তাঁর নাম জানা যায়নি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে অবস্থিত সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটে এই ঘটনা ঘটে। তবে সিসি ক্যামরায় ধারণ করা মারধরের ভিডিওটি শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরীর আগ্রাবাদে অবস্থিত এই মার্কেট সিটি করপোরেশনের। সেখানে সিটি করপোরেশনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মালেকের পরিবারের একটি দোকান রয়েছে। ওই দোকানটি এক ব্যবসায়ী ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু সাত মাস আগে দোকানে তালা দিয়ে চলে যান তিনি। এরপর দোকানটি বুঝে পেতে চেষ্টা করেন আবদুল মালেক। তবে এতে বাধার সম্মুখীন হলে তিনি সিটি করপোরেশনের দ্বারস্থ হন। সেই দোকান বুঝে দেওয়া নিয়েই মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের দুই কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ও লতিফুল হক কাজমী একটি কার্যালয়ে আলাপ করছিলেন। তাদের ডান পাশে বসা ছিলেন মনির হোসেন। আলাপের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাগবিতন্ডা হতে দেখা যায়। সেখানে বসা এক প্রবীণ তাদের থামানোর চেষ্টা করেন৷ একপর্যায়ে রেজাউল করিম আসন ছেড়ে মনির হোসেনের দিকে তেড়ে যান। থাপ্পড় দিতে থাকেন। এরপর লতিফুল হকও চড় থাপ্পড় দেন। পরে সিটি করপোরেশনের এক নিরাপত্তা কর্মী লাঠি দিয়ে মারতে মারতে কার্যালয়ের বাইরে নিয়ে যান।
ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, মার্কেটের একটি দোকানের মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কর্মকর্তা। তিনি তাঁর দোকান ১১ লাখ টাকা জামানতে এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ ব্যবসায়ী অনেকের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। এরপর থেকে দোকানটি বন্ধ রাখে মালিক সমিতি। এই ১১ লাখ টাকা দোকানের মালিক করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তাকে দেওয়ার জন্য বলেন সমিতির লোকজন। কিন্তু নিয়ম নীতি না মেনে ঐ কর্মকর্তা টাকাও দেবেন না, আবার তিনি দোকানও খুলতে চান। এতে বাধা দেওয়ায় তিনি প্রভাব খাটিয়ে করপোরেশনের লোকজন নিয়ে এসে মারধর করান।
তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী অভিযোগে করেছেন মনির হোসেন ঔদ্বত্যপূর্ণ আচরণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘দোকানের মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কর্মকর্তা। কিন্তু ভাড়াটিয়া চলে গেলেও তিনি দোকান খুলতে পারছিলেন না। সমিতির লোকজন বারবার বাধা দিচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি সিটি করপোরেশনের কাছে অভিযোগ করলে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। দোকানের বিষয়ে মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনার সময় ওই ব্যক্তি বারবার আঙ্গুল তুলে শাসাতে থাকেন। এ সময় হয়ত দুয়েকটি চড় থাপ্পড় দিয়ে থাকতে পারে।
তবে এ ব্যাপারে রেজাউল করিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আজকের সারাদেশ/হাতা