আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
‘আমি বুয়েটের আবরার হত্যা দেখিনি। কিন্তু তার সঙ্গে যা হয়েছিল আমার সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আল্লাহ সহায় আমি জীবিত আছি। আমি ভাবিনি আমি কাল বাঁচব।’
গত সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে চবির এএফ রহমান হলের ৪৪০ নম্বর রুমে নিজ দলের কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হওয়ার পর এমন মন্তব্য করেন আশিকুজ্জামান জয় নামে এক ছাত্রলীগকর্মী। তিনি চবির পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয় কেন- এমন অভিযোগ তুলে আশিকুজ্জামান জয়কে ঘণ্টাব্যাপী মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ৬ ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে।
অভিযুক্তরা হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল মিয়া (আতিশ ফয়সাল), ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী তনয় কান্তি সরকার, ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শাকিল আহমেদ এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের রাসেল রাজ-সহ ১৫ থেকে ২০ জন। তারা ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী আশিকুজ্জামান জয় বলেন, ইলিয়াস ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেন খারাপ- এর জের ধরে অভিযুক্তরাসহ আরও ১৫-২০ জন মিলে আমাকে মারধর করেন। তারা আমার ৪৪০ নম্বর রুমে এসে হত্যার চেষ্টা করেন। লাঠি, রড, হকিস্টিক এবং চেয়ার দিয়ে আমাকে মারধর করা হয়েছে। একপর্যায় হলের ছাদ থেকে ফেলে দিতে গেলে আমি কোনোমতে দৌড়ে পালিয়ে যাই।
আশিক আরও বলেন, পরে হলের গেটে আবার মারধর করা হয় যখন আমাকে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে সেটার প্রমাণ মিলবে। আমি হলের ২ জন সিনিয়রের সহযোগিতায় মেডিক্যালে গিয়ে চিকিৎসা নিই। জানি না কবে সুস্থ হবো। এ বিষয়ে প্রক্টর স্যারকে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়েছিলাম, স্যার আমাকে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আমি লিখিত অভিযোগ দেব।
অভিযুক্তদের দাবি, আশিক মাদকাসক্ত। দীর্ঘদিন মদ্যপ অবস্থায় হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাতলামি করতো সে। তাকে সবাই মিলে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। গত সোমবার রাতে তার বন্ধুরা এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে সেখানেও আশিক সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে সবাই তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করে হল থেকে বের করে দেয়।
অভিযুক্তদের একজন তনয় কান্তি সরকার বলেন, আশিক নেশা করে। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে সবার সঙ্গে তর্ক করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হালকা মারধর করেছিল বাকিরা। আমি যতটুকু সম্ভব তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম।
এ বিষয়ে বিজয় গ্রুপের একাংশের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর সৌরভ সাহা জয় বলেন, ঘটনার সময় প্রক্টরিয়ার বডি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি আমরা। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এ ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী আশিকের বেশকিছু মদ্যপ ছবি সামনে আসে। যেখানে দেখা যায় আশিক মদপান করছেন। এছাড়া সরেজমিনে আশিকের রুমে বেশকিছু মদের বোতলসহ মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, তিনি মাদক কারবারির সঙ্গেও জড়িত।
আজকের সারাদেশ/এমএইচ