সকাল ৬:৩৫, শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চবি ছাত্রলীগ কর্মীর কক্ষে দেশি-বিদেশি মদ ও মাদকের সরঞ্জাম, কক্ষ সিলগালা

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয়’র অনুসারী আশিকুজ্জামান জয়ের মদপানের কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মদ এবং মাদকের সরঞ্জামও। বিষয়টি আলোচনায় আসার পর এএফ রহমান হলের কক্ষটি সিলগালা করেছে হল কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গত সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে নিজ দলের অনুসারীদের হাতে মারধরের শিকার হন তিনি। বিজয় গ্রুপের একাংশের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ কেন- এমন প্রশ্ন করেই তাকে মারধর করা হয় বলে জানিয়েছিলেন আশিক। তবে এর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে  আশিকের মদপানের বেশকিছু ছবি।

মারধরকারী ছাত্রলীগের ৬ অনুসারী- (২০১৮-২৯ সেশনের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল মিয়া (আতিশ ফয়সাল), ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী তনয় কান্তি সরকার, ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শাকিল আহমেদ এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের রাসেল রাজ)। তাদের দাবি- নেশা করে হলজুড়ে মাতলামি করার কারণেই তার উপর চড়াও হন তারা। এর আগে বারবার বুঝানোর চেষ্টা করলেও আশিক উল্টো তর্কবিতর্কে জড়ান বন্ধুদের সঙ্গে- এমনটাই দাবি মারধরকারীদের।

এদিকে মারধরের শিকার চবির পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান থাকেন এএফ রহমান হলের ৪৪০ নম্বর কক্ষে। মারধরের পরদিন (২৩ এপ্রিল) সরেজমিনে ছাত্রলীগের এ অনুসারীর কক্ষে বেশকিছু বিদেশি ব্র্যান্ডের মদের বোতলসহ মাদক গ্রহণের নানান সরঞ্জাম দেখা যায়।

অভিযোগ রয়েছে- আশিক নিয়মিত মাদক সেবন ও কারবারির সঙ্গে জড়িত। মারধরের পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে আশিকের মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে আনেন তার সহপাঠীরাই। তবে শুধু তাই নয়, ওই হলে থাকা শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের অনুসারীদের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয় গেছে আরও বেশ কয়েকজনের নাম ও পরিচয়। যারা মাদক গ্রহণ এবং হলজুড়ে মাতলামির জন্য পরিচিত।

এর মধ্যে রয়েছে- সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুজাহিদ চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. পলাশ চৌধুরী, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহিম হোসাইন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরশিল আজিম নিলয়, নাট্যকলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আওয়াল হোসাইন সোহাগ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব আতিক, ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের রাব্বি, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাজমুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষ্বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ফারুকী,  ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম ও সংস্কৃত বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শুভ দাস রোহিত।

দীর্ঘদিন হলের আসন বরাদ্দ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। আর তাই হরহামেশাই হচ্ছে মাদকের বেচাকেনা। ক্যাম্পাসে হাত বাড়ালেই মেলে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ নানান দেশি-বিদেশি মাদক। চবির এএফ রহমান হলের যে ৪টি কক্ষে সবচেয়ে বেশি মাদকের আসর বসতো- এর মধ্যে একটি ছিল ৪৪০ নম্বর কক্ষ। এছাড়া ৪৩৪, ৩৩৪, ৩৩৫ এবং ৩৩৭ নম্বর কক্ষেও নিয়মিত বসে মাদকের আসর।

ছাত্রলীগ কর্মী আশিকুজ্জামানের মদপানের ছবিটি সামনে আসার পর তার সহপাঠীরা দাবি করেন, প্রায়সময় আশিকের রুমে মাদকের আসর বসতো। নিজ কক্ষে ব্যাচমেট এবং জুনিয়রদের নিয়ে মাদক আসর বসাতেন তিনি।

তার বেশ কয়েকজন সহপাঠী বলেন, আশিক এএফ রহমান হলে মাদক কারবারীর সঙ্গে জড়িত ছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে এসে ক্যাম্পাসে সাপ্লাই দিতো। সে নিজে যেমন মদ্যপ ছিল, তেমনি হলের জুনিয়রদের মাঝেও এই ব্যাধি ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

তারা আরও বলেন, সে মদ, গাঁজা থেকে শুরু করে সব ধরনের মাদকই সেবন করতো। কয়েকদিন আগেও বেতবুনিয়া থেকে অনেকগুলো মদের বোতল নিয়ে আসে সে। সে হলে মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। নিজেও মাদক নিতো, অন্যদেরকেও সরবরাহ করতো। তাই আমরা তাকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সে উল্টো আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে।

মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আশিকুজ্জামান জয়ের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এএফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আলী আরশাদ চৌধুরী বলেন, গত পরশু রাতে আশিক নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের পর জানতে পারি সে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকায় সহপাঠীরা মারধর করেছে। কিন্তু কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিৎ ছিল তাদের। পরদিন (২৪ এপ্রিল) আমি হলের ২ জন আবাসিক শিক্ষককে নিয়ে ৪৪০ নং কক্ষে গিয়ে সেখানে কিছু মদের বোতল দেখতে পাই। পরে কক্ষটি সিলগালা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আশিক হলে নেই। সে যদি এই রুমে উঠতে চায়, তখন আমরা তার সঙ্গে কথা বলবো। মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অহিদুল আলম বলেন, আশিকুজ্জামান জয় মাদকের সঙ্গে জড়িত কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হল প্রভোস্টকে বলা হয়েছে। মাদকের সঙ্গে কারও কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি যারা মাদকের কথা বলে ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে, আমরা তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা নিবো।

আজকের সারাদেশ/এমএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চবি, রাতের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ

কত টাকা পেল কোপা ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা-স্পেন?

ঢাবিতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ১৮২, মেডিকেলেও হামলা

চবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় চলছে ছাত্রলীগের হামলা

‘যৌতুক’ হিসেবে হবু জামাইকে বিসিএসের প্রশ্ন দিয়েছিলেন পিএসসি সদস্য

শখের বসে ৩০ বছর ধরে কাচের বাল্ব চিবিয়ে খান রাজশাহীর মুক্তার

নাটোরে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়া কয়েক কেজি গাঁজা নিয়ে মানুষের কাড়াকাড়ি

নির্বাচনী সমাবেশে প্রকাশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি

স্বঘোষিত মেধাবীরা কি বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের পার্থক্য বুঝে না: ছাত্রলীগ সভাপতি

আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতার চেষ্টা করলে পরিণাম ভালো হবে না: ছাত্রলীগ সেক্রেটারি