আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে জলদস্যু ও ডাকাত নির্মূল করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলকে আমরা জলদস্যু-ডাকাত মুক্ত করব। সেখানে কোন ডাকত থাকবে না। যারা আছে তাদের আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবো।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে নগরীর পতেঙ্গাস্থ র্যাব-৭ এর সদর দফতর মাঠে জলদস্যু আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজ এখানে একজন মহিলা জলদস্যুও আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা কখনও অত্যাচারিত বা নিপীড়িত হয়ে বাধ্য হয়ে এসব কাজে জড়িয়ে থাকেন। স্থানীয় প্রভাবশালী লোকেরাও তাদের বাধ্য করেন এসব কাজে জড়াতে। জন্মলগ্ন থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করতে গিয়ে র্যাবের ৩৩ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন। হাজার হাজার র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। অনেকের অঙ্গহানিও হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, জনগণের কাছে র্যাব একটি আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। সুন্দরবনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষায় ২০১২ সালে র্যাবকে টাস্ক ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র্যাবের দুঃসাহসিক অভিযানে সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত হয়। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত ঘোষণা করেন। তারা যাতে আর সে কাজে ফিরতে না পারে তাদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে। আজ তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। কেউ ব্যবসা করছে বা অন্য কাজ করছে।
‘পাবনাতে ৬০০ ও সিরাজগঞ্জে ৩০০ এর অধিক চরমপন্থি গ্রুপের নেতাকর্মী আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদেরও সরকার সহযোগিতা করেছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ও খুনের মামলা আছে তাদের কোনোভাবে সহযোগিতা করা হবে না। অন্য মামলাগুলো থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য কাজ করা হবে। আজ ১২টি গ্রুপের ৫০ জন ৮০টি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছেন।’
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম তো আর সেই চট্টগ্রাম নেই। অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। টানেল, সেতু সব হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের সিকিউরিটির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। ওসব এলাকায় জলদস্যুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সুন্দরবনে জলদস্যুদের ভালো অবস্থা দেখে আজ তারা উদ্বুদ্ধ। সাংবাদিকদের সহযোগিতায় এ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাদের ধন্যবাদ জানাই। আর যারা ফিরে আসেন নাই, আমরা কাউকে ছাড় দেব না। যে কোনো মূল্য অপরাধীদের দমন করব। তারা যেন অপরাধ করার চিন্তাও না করে সে কাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে। জলদস্যুতা আপনাদের জীবনে কখনও শান্তি ফিরিয়ে আনবে না।
উপকূল অঞ্চলে জলদস্যু-ডাকাত মুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে মন্ত্রী বলনে, আমিরা খুব শীঘ্রই সমস্ত অঞ্চল জলদস্যু ও ডাকাত মুক্ত ঘোষণা করব। আমরা কাউকে ক্ষমা প্রদর্শন করব না। যারা এ পেশা ত্যাগ করবেন না তারা কি দুঃসংবাদ লিখে নিয়ে যাবেন সেটা মহান আল্লাহ জানেন। কাউকে ক্ষমা করা হবে না।
পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, র্যাব সন্ত্রাসীদের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। জঙ্গি নির্মূল র্যাবের ভূমিকা অপরিসীম। র্যাব অপরাধ দমনের জন্য কিছু সৃজনশীল কাজ হাতে নিয়েছে। জনগণের শান্তির জন্য পুলিশের সঙ্গে র্যাব কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। সুন্দরবন জলদস্যুদের আস্তানা ও আধিপত্য ছিল। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করেছেন। যেটা র্যাবের মাধ্যমে হয়েছে। জলদস্যুদের সুন্দর জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। কাজ করতে কাউকে জাল, নৌকা, দোকান দেওয়া হয়েছে। ঘর করে দেওয়া হয়েছে। দুবলার চরে সুপেয় পানির জন্য র্যাব ওয়াটার প্ল্যানেট করে দিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯ বাহিনীর মোট ৫০ জলদস্যুর মধ্যে ১১ জন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এরমধ্যে তিনজনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জলদস্যু।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ, র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, সিএমপি পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মাহাবুব আলম, রেঞ্জ ডিআইজি নূরে আলম মিনা ও র্যাব-৭ অধিনায়ক মাহবুব আলম, সিএমপি কমিশন কৃষ্ণ পদরায় ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রমুখ।
