সকাল ৬:৫২, মঙ্গলবার, ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘যাদের জন্য মারছিলাম, তারাই এখন ঠাট্টাবিদ্রুপ করছে’

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন

আমার দুরাবস্থা দেখে একজন ‘স্রষ্টার বিচার’ বলে স্ট্যাটাস দিলো, অন্যদের দেখলাম বিভিন্ন পোস্টের কমেন্টবক্সে ঠাট্টা করতেসে। যে স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে- তাকে যাদের জন্য মারছিলাম তারাই এখন ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাহজালাল হলের জানালার গ্রিল বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়ার পর  অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক মোহাম্মদ জুয়েল ছাত্র রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এমন প্রতিক্রিয়া জানান।

শুক্রবার (২১ জুন) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ স্ট্যাটাস দেন।

ফেসবুক স্টাটাসে জুয়েল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্ররাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। এই রাজনীতির জন্য কতবেলা খেয়ে না খেয়ে পড়ে ছিলাম, তা কাউকে বলেকয়ে বুঝানোর সাধ্য নেই। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে অসংখ্যবার ভুল করেছি। ভুল করেছি ছোটভাইয়ের ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশবক্সে দায়িত্বরত পুলিশের সাথে উচ্চবাচ্য করে। ভুল করেছি নিজেকে সর্বেসর্বা ভেবে, নিজের একাডেমিক ক্যারিয়ার নিয়ে ছেলেখেলা করে। ভুল করেছি আমার স্ট্রোক করে অসুস্থ মা’কে হাসপাতালে ফেলে রেখে প্রিয় বগির জন্মবার্ষিকীতে শরীক হয়ে।

ভুল করেছি মা-বাবার অবাধ্য হয়ে মাসের পর মাস বিশ্ববিদ্যালয়ে চৌকাঠে পড়ে থেকে। টেকনাফ কিংবা তেতুলিয়া থেকে যারা এসেছিল তারাও বছরে দু’বার বাড়ি যেত, আমি যেতাম বড়জোর একবার। এটা ভুল নয়তো কি? আমার ভুলের ফিরিস্তি লিখতে গেলে হয়তো শেষ হবেনা, কিন্তু জীবনে হয়তো কিছু সঠিকও ছিলো, তা না হলে আমার অস্তিত্ব এতদিনে বিলীন হয়ে যেত।

আমার দুরাবস্থা দেখে একজন ‘স্রষ্টার বিচার’ বলে স্ট্যাটাস দিলো, অন্যদের দেখলাম বিভিন্ন পোস্টের কমেন্টবক্সে ঠাট্টা করতেছে। যে স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে- তাকে যাদের জন্য মারছিলাম তারাই এখন ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছে। এটাই জীবন। আমার মেনে নিতে হবে।

এতদিন জানতাম মা-বাবার পর শিক্ষকের অবস্থান। তাই আমার ভুলের মাশুল হিসেবে বহিষ্কার চাইলাম, বিনিময়ে চাইলাম সন্তানতুল্য আমাকে আমার সম্মান জিইয়ে রেখে মাথাতুলে বাঁচার অধিকার। কিন্তু পুলিশ তাঁর প্রতিশোধ নিতে একবিন্দু ছাড় দিলো না। সাংবাদিকদের ডেকে প্রচার করলো। হয়তো এটাই নিয়তি।

ভুল থেকে শিখতে হবে। আমার জন্য যাদের মানসম্মানে আঘাত এসেছে আমি সকলের কাছে বিনম্রতার সাথে ক্ষমা প্রার্থণা করছি। আমাকে আপনারা ক্ষমা করে দিবেন। আমি লজ্জিত। কোন মুখে আমি আবার আপনাদের সম্মুখ হব আমার জানা নেই। আমি সবচেয়ে বেশি লজ্জিত আমার ছোটদের কাছে। যাদের জন্য আমি আমার সবকিছু বিলিয়ে দিতে পারতাম কিংবা যারা আমার আত্মার সাথে জড়িত। তোমাদের কাছে অনেক বেশি লজ্জিত। বড় ভাই হিসেবে আমি তোমাদের সম্মানের অযোগ্য। আমার ছোট ভাই হিসেবে তোমরা কখনো কাউকে পরিচয় দিওনা এটা অনুরোধ রইলো।বিদায় প্রাণের সংগঠন, বিদায় প্রিয় শাহজালাল হল। দোয়া করবেন যেন সার্টিফিকেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে পারি। সৃষ্টিকর্তা সকলের মঙ্গল করুন।’

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের জানালার গ্রিল বিক্রির উদ্দেশ্যে বের হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে মোহাম্মদ জুয়েলকে আটক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা। পরে মুচলেকা দিয়ে এমন কাজ ভবিষ্যতে না করার শর্তে তাকে ছেড়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি।

সর্বশেষ সংবাদ