সন্ধ্যা ৬:৪৬, মঙ্গলবার, ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একই সুতোয় বাধা ছিলেন দুই বন্ধু, মৃত্যুও হলো একসঙ্গে

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই লাশঘর। সেখানে পাশাপাশি দুটি আসনে শুয়ে আছেন দুই বন্ধু-মোহাম্মদ শাহেদ ও মোহাম্মদ ইকবাল। আড্ডা ছাড়া দুই বন্ধুর সময়ই কাটত না। কাছাকাছি থেকেও সেই দুই বন্ধুর মুখেই কিনা আজ নেই কোনো কথা, সুখ-দুঃখের গল্প। হবেই বা কি করে-আগুনের ধোঁয়ার কুন্ডুলীতে যে দুই বন্ধুর শরীর নিস্তব্দ হয়ে গেছে চিরতরে।

শাহেদ ও ইকবাল-দুই বন্ধুই প্রায় কাছাকাছি বয়সের। শাহেদ ১৮ বছরের আর ইকবালের বয়স ১৭। সাতকানিয়ার মির্জাখীল এলাকার বাসিন্দা এই দুই তরুণ ছোটকাল থেকেই বেড়ে ওঠেছেন একসঙ্গে। পরে চট্টগ্রাম শহরে এসে দুটি দোকানে চাকরি নেন দুই বন্ধু। পুরো সপ্তাহে নিজ নিজ কর্মস্থলে দুজন ব্যস্ত থাকলেও এক বন্ধুর মন পড়ে থাকত আরেক বন্ধুর কাছে। তাই তো বৃহস্পতিবার রাত এলেই শাহেদের বাসায় ছুঁটে আসতেন ইকবাল। গল্প-আড্ডা-মুঠোফোনে গেমস খেলতে খেলতেই কবে যে দুই বন্ধুর রাত শেষ হয়ে যেত নিজেরাই জানতেন না। বন্ধু শাহেদের সঙ্গে সময় কাটানোর পর শুক্রবার বিদায় নিয়ে ইকবাল ফিরতেন নিজের বাসায়। এবার আর এক বন্ধু আরেক বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিতে পারেননি। তারই আগে যে জীবন থেকেই বিদায় নিয়েছেন দুজন।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রিয়াজউদ্দিন বাজারে আগুনে দুই বন্ধুই হারিয়েছেন প্রাণ। তাঁদের পাশাপাশি মারা গেছেন মোহাম্মদ রিদোয়ান নামের ৪৫ বছরের এক যুবকও।

মোহাম্মদ শাহেদ রিয়াজউদ্দিন বাজারের রেজওয়ান কমপ্লেক্সের আজওয়ার টেলিকম নামের একটি মুঠোফোনের যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানে চাকরি করতেন। ইকবাল অন্য একটি দোকানে চাকরি করতেন।

আজওয়ার টেলিকমের মালিক সাজ্জাদ মিয়া তাঁর কর্মী শাহেদকে হারিয়ে শোকাস্তব্দ হয়ে পড়েছেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন শাহেদকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই পারেননি। সাজ্জাদ মিয়া বলেন, ‘শাহেদ ও ইকবাল ছিল তন্নিষ্ঠ বন্ধু। এক বন্ধুর জন্য আরেক বন্ধুর টান কতটা সেটা আমি অনুভব করতাম। ব্যবসার ফাঁকে সুযোগ পেলেই ইকবালের সঙ্গে ফোনে কথা
বলত শাহেদ। আমি বৃহস্পতিবার বাড়িতে গেলে বাসা ফাঁকা থাকত। তাই ইকবালকে নিয়ে আসত শাহেদ। আগুন লাগার সময় দুই বন্ধু বাসাতেই ছিল। মৃত্যুও হলো একসঙ্গেই।’

রেজওয়ান কমপ্লেক্সের গা ঘেঁষেই মোহাম্মদী প্লাজা। এই প্লাজার দোতলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের রেজওয়ান কমপ্লেক্সে। আর তাতে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন।

মোহাম্মদী কমপ্লেক্সের অ্যাওয়ে টেলিকমের মোহাম্মদ রিদোয়ানের সঙ্গে পরিচয় ছিল মোহাম্মদ শাহেদের। তিনি বলেন, শাহেদ ও ইকবাল দুজনকেই চিনতাম। তারা খুব কাছের বন্ধু ছিলেন। বৃহস্পতিবার এলেই ইকবাল ছুটে আসতেন বন্ধু শাহেদের বাসায়। শুনেছি আগুন ধরলে তাদের কেও কেও ডাকাডাকি করেন, তবে তারা কানে হেডফোন গুঁজে গেমস খেলায় সেটি শোনেননি। পরে আগুণ বেড়ে গেলে তারা বুঝতে পারেন। কিন্তু ততক্ষণে কালো ধোঁয়া তাদের ঘিরে ফেলে। সেই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান তাঁরা।’

আগুনে শাহেদ ও ইকবালের প্রাণ হারানোর খবরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনেরা। জরুরি বিভাগের পাশের একটি কক্ষে বসিয়ে তাদের কাছ থেকে নানা তথ্য নেন পুলিশের সদস্যরা।

সাতকানিয়ার বাংলাবাজার মির্জাখীলের কুতুব পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন শাহেদ ও ইকবাল। ছেলেকে হারিয়ে কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই শাহেদের শোকাস্তব্দ বাবা বেঠা মিয়া। তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন পুরোটা সময়।

ভাগ্নের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মামা মোহাম্মদ সোলায়মান। বলেন, ছোটকালে কোলেপিঠে করে ওকে বড় করেছি। তাকে আবার পিঠে নিয়ে
কবরস্থানে নিতে হবে ভাবিনি কোনোদিন।

সোলায়মানের মন পুড়ছে ভাগ্নের বন্ধু ইকবালের জন্যও। বলেন, ‘শাহেদ আর ইকবাল ছোট বেলা থেকেই বন্ধু। এক বিছানায় ঘুমানো, এক প্লেটে খাওয়ার মতো বন্ধু ছিল দুজন। ইকবাল আমার ভাগ্নের বাসায় এসেছিল বেড়াতে। বেড়াতে এসে তাকেও মর্মান্তিকভাবে মারা যেতে হলো। কাকে আর দোষ দেব।’

শাহেদরা দুই ভাই। বড় ভাই সৌদি আরব প্রবাসী। শাহেদের চাচা জসিম উদ্দিন বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজারে আগুন ধরেছে আমরা সেটি রাতেই খবর পাই। কিন্তু সেখানে যে আমার ভাতিজা আটকা পড়েছে সেটি জানতাম না।
সকালে খবর পাই শাহেদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে চমেক হাসপাতালে এসে তাঁর মরদেহ খুঁজে পাই। পেয়েছি তার বন্ধু ইকবালের মরদেহও। দুই বন্ধুই ১৭-১৮ বছরের। একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারত না। এখন মারাও গেল একসঙ্গে।

আগুনে বেশকিছু দোকান পুড়ে ছাই হলেও অক্ষত আছে শাহেদ যে দোকানে চাকরি করতেন সেটি। আজওয়ার টেলিকম নামের সেই দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়ার তবু মন খারাপ। এই মন খারাপের পুরোটাই শাহেদের জন্য। বলেন, গতকাল একসঙ্গে দোকানে বসে দুজন ক্রেতা সামলালাম। রাতে ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি গেলাম। শেষ রাতে এসে দেখি ও নাই হয়ে গেল। কীভাবে মানব? আরো খারাপ লাগছে ওর সঙ্গে সময় কাটাতে এসে মারা যাওয়া বন্ধু ইকবালের জন্য।’

শাহেদ ও ইকবাল-সারাজীবন একই সুঁতোয় বাঁধা ছিল দুই বন্ধুর জীবন। মৃত্যুর পথেও পাড়ি দিলেন একইসঙ্গে। কিছু সময়ের ব্যবধানে দূরে কোথায়, অন্য কোনোখানে হয়তো আবারও দেখা হয়ে যাচ্ছে দুই অভিন্ন আত্মার!

সর্বশেষ সংবাদ

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

পাহাড়ে সেনাশাসন নয়, অপতৎপরতা প্রতিহত করতেই সেনাবাহিনী

চবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপন

যুবদল নেতা শহিদুল ইসলাম শহিদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা

ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলেম-ওলামাদের ঢল

বিএনপি নেতাদের চাপে বন্ধ হওয়া নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের দাবি

উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ নভেম্বর লন্ডনে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া!

রাখাইনে বোমা ও মর্টারশেলের শব্দে কাঁপছে টেকনাফ সীমান্ত