সকাল ৭:০৫, মঙ্গলবার, ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন

সরকার কর্তৃক জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিমসংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে একাট্টা হয়ে আন্দোলন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়ন। ত্রিমুখী এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করছে একাডেমিক অচলাবস্থা।

এদিন বন্ধ ছিল সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল দাপ্তরিক কাজ। এভাবে চলতে থাকলে চরম সেশনজটের সৃষ্টি হতে পারে বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে শিক্ষক সমিতি কার্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দাপ্তরিক কাজ থেকে বিরত থেকে অফিসার সমিতির কার্যালয়ে অবস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে নিজেদের বিরত রেখে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

চবি অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল আসাদ বলেন, ২০২৩ সালে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের যে বিধিমালা হয়েছে ২০২৪ সালে ওখানে ‘প্রত্যয় স্কিম’ সংযুক্ত করা হয়েছে। আর এই প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতেই আমাদের এই কর্মবিরতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ঐক্য পরিষদ গঠন করেছি। এটার মাধ্যমে আমাদের কর্মসূচি চলবে।

চবি কর্মচারী ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, প্রজ্ঞাপন অনুসারে আজকে থেকে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী হিসেবে যোগ দেবেন তাদের সঙ্গে বর্তমান কর্মচারীদের বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হবে। এ ধরনের বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম আমরা চাই না। আগের পেনশন নীতি চলমান থাকুক এটাই আমাদের দাবি।

চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এ.বি.এম আবু নোমান বলেন, আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য আলাদা পে স্কেলের আন্দোলন করছিলাম তখনোই দেখি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। ভুলে গেলে চলবে না, যে সমস্ত মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন, যদি সামাজিক সুরক্ষা না থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাদের থাকবে না। যদি মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষক হিসেবে যোগদান না করেন সেক্ষেত্রে আমাদের আগামী প্রজন্ম সেভাবে মেধাবী হয়ে গড়ে উঠবে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আন্দোলনের কারণে যদি শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই বিগত দিনগুলোতে সেশনজট কমানোর জন্য শিক্ষার্থীদের যেভাবে নিজেদের নিবেদিত প্রাণ করেছিলাম, এখনও আমরা সেটি অবশ্যই করব এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই যে ছাত্রদের শিক্ষাজীবন বিলম্বিত হবে।

এদিকে চলমান এই আন্দোলনের কারণে চরমভাবে একাডেমিক সেশনজটের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে বিভিন্ন কারণে প্রশাসনিক কাজে আসা ব্যক্তিরাও চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।

এই ব্যাপারে বাংলা বিভাগের বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো বিভাগে ইতোমধ্যেই সেশনজট রয়েছে। তার ওপর রেজাল্ট অনেক বিলম্বিত হয়। আন্দোলনের কারণে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে। আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে ব্যাপক সেশনজটের সম্মুখীন হবে শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, করোনার সময় যেমন আমরা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে ছাত্রদের ক্ষতিপূরণ করেছি, সর্বাত্মক কর্মসূচির কারণে ছাত্রদের যা ক্ষতি হবে তা আমরা অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে পূরণ করবো।

সর্বশেষ সংবাদ