রাত ৪:০১, রবিবার, ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চবি উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক শামীম অথবা ড. আতিয়ারকে চান শিক্ষার্থীরা

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভেঙে পড়েছে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। উপাচার্য থেকে শুরু করে উপ-উপাচার্যসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরাও পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাদের যৌক্তিক আন্দোলনে যারা সমর্থন জানাননি বরং স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষে কথা বলেছেন তাদের কোনো অধিকার নেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্ব পালন করার। তবে যারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন করেছেন, একাডেমিকভাবে যোগ্য এবং শিক্ষার্থীবান্ধব এমন কাউকেই উপাচার্য হিসেবে দেখতে চান শিক্ষার্থীরা। এ আলোচনায় এক নম্বরেই আছে চবির বর্তমান সিন্ডিকেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের নাম।

ক্ষমতার রদবদলের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক পেইজও গ্রুপগুলোতে উপাচার্য হিসেবে কাকে চান শিক্ষার্থীরা; এরকম বেশকিছু পোল খুলে মতামত যাচাই করতে দেখা যায়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা নিজেরাও বিভিন্ন স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানান দিতে থাকেন, তারা কাকে উপাচার্য হিসেবে যোগ্য মনে করেন। গত ১৮ আগস্ট ‘শীঘ্রই আসছে চবির নতুন প্রশাসন, আলোচনায় যারা’ ও ২২ আগস্ট ‘চবির উপাচার্য পদে অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খানকে চায় সাদা দল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন।

মূলত আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের তোপের মুখে পড়লে চবি শিক্ষকরা একটি নতুন প্লাটফর্ম তৈরি করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। সেই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক ঐক্যের প্রধান সমন্নয়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের নিকট এ প্রবীণ অধ্যাপকের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়তে থাকে। এছাড়া তিনি অধ্যাপকদের ভোটে নির্বাচিত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যেও আছে গ্রহণযোগ্যতা।

এদিকে গণতন্ত্র, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শে উজ্জীবিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের এক সাধারণ সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের আলোকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক যোগ্যতা বিচারে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক ঐক্যের প্রধান সমন্বয়ক, সাদা দলের আহ্বায়ক ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানকে সুপারিশ করা হয়।

শামীন উদ্দিন খান সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক গ্রুপে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় হোসাইন সাইদ মন্তব্য করেন, অনেকেই নিরপেক্ষ ও নির্দলীয়র কথা বলছেন। একটা কথা মনে রাখবেন নিরপেক্ষ, নির্দলীয় বলা শুধু বলার জন্যই। প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো মতাদর্শ লালন করেন। কেউ স্বীকার করেন আর কেউ করেন না। তাই এসব শব্দ পরিহার করুন। দল না দেখে ব্যক্তির কর্ম দেখে বিবেচনা করুন।

আলোচনায় অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমান:

কে হবেন চবির পরবর্তী উপাচার্য- এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চলছে নানান জল্পনা কল্পনা। দাবি উঠেছে নির্দলীয়, শিক্ষার্থী ও গবেষণাবান্ধব শিক্ষক বসবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার আসনে। এমন আলোচনায় উপাচার্য হিসেবে চবির প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমান গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমানের গবেষণা কার্যক্রম ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে সমর্থন করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমানকে উপাচার্য হিসেবে বিবেচনা করার নানান কারণ উল্লেখ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সোহানুর রহমান বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, যখন সন্ত্রাসী আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশলীগের ধারাবাহিক গুলির মুখে শিক্ষার্থীরা অভিভাবক শূন্য, তখন আতিয়ার রহমান স্যার জীবনের পরোয়া না করে ৪ আগস্ট সকালবেলা নিউ মার্কেটে অবস্থান নেন এবং শিক্ষার্থীদের জড়ো হতে সাহায্য করেন। এমন সাহসী, শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষককেই চবি ভিসি হিসেবে প্রয়োজন। কোনো খুনি প্রশাসন এখনো চবিতে বহাল থাক তা আমরা চাই না। আর স্যারের একাডেমিক বিষয়ে জানতে চাইলে গুগলে সার্চ করতে পারেন।

ইমতিয়াজ নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন, শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিবৃতি দেয়ায় গত ৩০ জুলাই রাত ২টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের চেয়্যারম্যান অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমান স্যারের বাসায় কাপুরুষরা হামলা চালিয়েছে। স্যারকে ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেছিলাম। স্যার আমাকে উল্টো বললেন কাপুরুষদের কাপুরষতায় দুঃখ প্রকাশের কিছু নেই। স্যারের কণ্ঠে ছিলো বলিষ্ঠতা। আতিয়ার স্যার কেমন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক তা বায়োলজি ফ্যাকাল্টির সব শিক্ষার্থীরা জানে।

আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, আতিয়ার রহমান স্যার আমার সরাসরি শিক্ষক নন কিংবা আমার গবেষনা ক্ষেত্রের কেউ নন। লিংকডিন সুত্রে ওনার গবেষনা কর্মগুলো দেখি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে গোনা যে কয়েকজন শিক্ষক গবেষনায় চবির সুনাম বয়ে এনেছেন, ড. রহমান তাদের একজন। ওনার ১৭৩টি পেপারের মধ্যে কমপক্ষে ৩০টি পেপার রয়েছে যার প্রত্যেকটির সাইটেশন অন্তত ৩০ (h-index 30)। সর্বনিম্ম ১০টি সাইটেশন যুক্ত পেপার রয়েছে ৯৭টি (i10-index)। টোটাল ৩ হাজার ৪০২টি সাইটেশন নিয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ সর্বোচ্চ সাইটেট স্কলার।

চবির সাবেক শিক্ষার্থী মালিহান মোমতাজ তিতলি বলেন, আতিয়ার রহমান স্যার অত্যন্ত ডিসিপ্লিন্ড এবং সৎ মানুষ। এমন কেউ ভিসি হলে ক্যাম্পাস থেকে অরাজকতা দূর হতে সময় লাগবেনা। সাবেক হওয়া সত্ত্বেও একজন ভালো ভিসি চাই কারণ শিরীণ আখতারের আন্ডারে ক্যাম্পাস এবং হলে যথেষ্ট ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।

গত ৯ আগস্ট ‘চবিয়ান’ নামক একটি ফেইসবুক পেজে ‘চবি উপাচার্য হিসেবে কাকে চান’ এমন একটি জরিপে দেখা যায় অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমানের পক্ষে ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই ভোট দিয়েছিলেন। যেখানে ভোটের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৫৫টি। এছাড়া ৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল ‘অন্য কাউকে চাই’ অপশনে। যেখানে ভোট পড়েছিল মাত্র ৫৫টি। এমন জরিপ থেকেই কিছুটা আঁচ করা যায় অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমানের জনপ্রিয়তা কতখানি। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করায় ড. আতিয়ারের বাসায় ছাত্রলীগের হামলার পর এ শিক্ষকের জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে থাকে।

সর্বশেষ সংবাদ

কবিতা: স্বাধীনতা।

ভূমি, কার্গো দখল ও ঘর ভাংচুরের ঘটনায় কবিরহাট থানায় মামলা

চবিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ‘মুক্ত সংলাপ’ প্রত্যাখান শিক্ষার্থীদের, ষড়যন্ত্র না করতে দিল হুঁশিয়ারি

১৫ বছর পর মাতৃভূমিতে যুবদল নেতা হাসান নূরী

চবি উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক শামীম অথবা ড. আতিয়ারকে চান শিক্ষার্থীরা

ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার দায় নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন পলক

কোপা আমেরিকার সেরা একাদশে ৫ জনই আর্জেন্টিনার, ব্রাজিলের এক

গুলিবিদ্ধ কিশোরকে রিকশায় তুলতে গিয়ে দেখলেন নিজেরই সন্তান

নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করবে চবি কর্তৃপক্ষ

১২ দিন পর স্বল্প পরিসরে ট্রেন সার্ভিস চালু