সকাল ৭:০৪, বৃহস্পতিবার, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সন্ধানীর রক্তে প্রাণ বাঁচে হাজারো রোগীর!

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:

ফটিকছড়ির বাসিন্দা সবুর মিয়া। ৩০ সেপ্টেম্বর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করান তিনি। চলতি মাসের ২ অক্টোবর সন্তান প্রসব করেন তাঁর স্ত্রী। তখনই ২ ব্যাগ রক্তের দরকার পড়ে। কিন্তু রক্তদাতা পতেঙ্গা থেকে আসতে দেরী হচ্ছে। কি করবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান সবুর। এরমধ্যেই এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ‘সন্ধানী’ র বিষয়ে জানতে পারেন তিনি। দ্রুত যোগাযোগ করতেই হয়ে যায় রক্তের ব্যবস্থা, তাও একেবারে বিনামূল্যে। আরেক রক্তদাতার নাম-ঠিকানা জমা দিতে হয়েছে কেবল।

চমেক শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত রক্তদানের সংগঠন এই সন্ধানী। এভাবে ২০২২ সালে ৩ হাজার ৫৬৬ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করেছে সংগঠনটি। ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত সংগঠন থেকে ১ হাজার ৫৭৩ ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগ চমেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অসহায় রোগীদের রক্ত দান করেছে সেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি। যেখানে কোনো প্রকার অর্থ ছাড়া মাত্র একটি রক্তদাতার বিনিময়ে রক্ত পেয়ে থাকেন সাধারণ রোগীরা। শুধু রক্তদান নয় টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হিউম্যান প্যাপালেমা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা প্রদান, মরোণত্তর চক্ষু দানসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে সংগঠনটি। এভাবেই দিনে দিনে গরীব রোগীর ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে সেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি।

যথা সময়ে রক্ত পেয়ে সবুর মিয়া মুঠোফোনে আজকের সারাদেশকে বলেন, সন্ধানীর জন্য আমি আমার স্ত্রীর জন্য রক্ত পেয়েছি। এর বিনিময়ে কোনো টাকা নেননি তারা। কিন্ত আমি যদি বেসরকারি ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নিতাম অনেক টাকা চলে যেত। সন্ধানী আমাদের মতো গরীব মানুষের ভরসাস্থল।

জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ৬ জন শিক্ষার্থী প্রথম সন্ধানী প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুর দিকে শুধু মাত্র অসচ্ছল গরীব শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার লক্ষ্য ছিল। পরে রক্তদানের কর্মসূচির মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রশংসা লাভ করে সংগঠনটি। পরে ১৯৮২ সালের ২ ডিসেম্বর চমেকেওযাত্রা শুরু করে সংগঠনটি।

এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. গোলাম রাব্বানী আজকের সারাদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে থ্যালাসেমিয়া রোগীর বিরাট অংশকে সন্ধানী রক্ত দান করে থাকে। এটা অবশ্যই দৃষ্টান্ত উদাহারণ। কেননা একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে প্রতিমাসে ৩ থেকে ৪ বার রক্ত দিতে হয়। এত রক্ত সংগ্রহ করা হয়। আামদের কাছে আসা রোগীদের সন্ধানীর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে রক্ত যারা দান করেন তাদের স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। রক্তদাতার কমপক্ষে ওজন ৫০ কেজির উপরে থাকতে হবে। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর রক্ত দান করাটাই স্বাস্থ্যসম্মত। ’

যেসব কাজ করে সন্ধানী

রক্তদান: একজন রোগী যে কেউ সন্ধানী থেকে রক্ত নিতে পারেন। তার জন্য কোনো প্রকার টাকা দিতে হয় না। তবে রক্ত নেওয়ার পর একজন দাতার নম্বর এবং ঠিকানা দিতে হয়। যিনি পরবর্তিতে অন্য কোনো রোগীকে রক্ত দান করতে পারেন।

টিকা প্রদান: মাসের প্রথম শুক্রবার টাইফয়েড, হেপাইটাইটিস বি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হিউম্যান প্যাপালেমা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা প্রদান করে। যারমধ্যে ভ্যাক্সফয়েড টিকা ডোজ হিসেবে দেওয়া হয়। টিকা ফি বাবদ ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। হেপা-বি’র জন্য প্রথমে স্ক্রিনিং করতে হয়। যার জন্য ১০০ টাকা লাগে। টিকা ফি বাবদ ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। এছাড়া ইনফ্লুভ্যাক্স টেট্রা ৯৫০ টাকা জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ টিকা প্যাপিলোভ্যাক্স জন্য ২৪০০ টাকা নেওয়া হয়।

মরোণোত্তর চক্ষু দান: যেসব ব্যক্তি সেচ্ছায় মৃত্যুর পর তাদের চোখ দান করে যেতে চান। তাদের চোখ সংরক্ষণ, চোখ, কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করার জন্য মানুষকে সচেতনের কাজও পরিচালনা করছে সংগঠনটি।’

সরেজমিন সোমবার (২ অক্টোবর) চমেকের নিচ তলায় অবস্থিত সন্ধানী কার্যালয়ে দেখা যায়- দুটো ছোট কক্ষ। প্রথমটিতে অফিস সহায়ক একটি চেয়ার টেবিল নিয়ে বসেন। যারা রক্ত নিতে যান সব তথ্য সেখানে লিবিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া সেই কক্ষে রক্ত সংগ্রহ করাও হয়। তার পেছোনেই আরেকটি কক্ষ। সেটিই মূলত কার্যালয়। একটি বড় টেবিল ৪-৫ টা চেয়ার পাতানো। রুমের চারদিকে সন্ধানীর সংগঠনে অবদান রাখা ব্যক্তিদের ছবি বাঁধাই করে রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রাপ্ত পুরষ্কারগুলো সাজানো হয়েছে।

সেখানেই কথা হয় সন্ধানীর সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম আরমানের সঙ্গে। আজকের সারাদেশকে তিনি বলেন, দিন দিন রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ছে। আমরা বেশিরভাগ চমেক হাসপাতালে রোগীদের কাছে রক্ত সরবরাহ করি। একজন সুস্থ সবল লোক বছরে চারবার রক্ত দিতে পারেন। এই রক্ত দিয়ে আরেকজনের জীবন বাঁচাতে পারেন। রক্ত না দিলেও তার নিজের কোনো উপকার নেই, সেই রক্ত শরীরের মধ্যে এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিটি মানুষকে রক্ত দানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আমাদের সন্ধানীতে ১০২ বার রক্ত দিয়েছেন এমন দাতাও রয়েছেন। দাতারা নিয়মিত রক্ত দান করে যাচ্ছেন। একটি রক্তের জন্য একটি প্রাণও যেন ঝরে না পড়ে সেটাই আমাদের প্রত্যাশ্যা।

সন্ধ্যানীর সভাপতি উপমা ধর আজকের সারাদেশকে বলেন, অতীতের তুলনায় এখন রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ এখন সেচ্ছায় রক্তদান করছেন। এখন আমরা মরোণত্তর অঙ্গ দান কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছি। একজন মানুষ মারা গেলে সেই লোকের চোখ, কিডনিমহ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করা যায়। এতে করে সহজে এখন অসুস্থ ব্যক্তিকে কিডনি দান, চক্ষু দান করা যায়। তার জন্য মানুসকে আরও সচেতন করে তুলতে হবে। মরোণত্তর অঙ্গ দানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যাতে কারে রক্তের মতো চক্ষু, কিডনি সহজে পাওয়া যায়।’

এই বিষয়ে আরও কথা হয় চমেকের অধ্যাপক ডা. শাহেনা আক্তারে সঙ্গে। তিনি বলেন, “সন্ধ্যানী বহু বছরের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। এছাড়া স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত সংগঠন এটি। গরীব রোগীদের জীবন বাঁচাতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে। এই সেচ্ছাসেবী সংগঠনের উন্নয়নে চমেক তৎপর রয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে রয়েছে।”

আজকের সারাদেশ/৫ অক্টোবর ২০২৩/জেএম

সর্বশেষ সংবাদ

কবিতা: স্বাধীনতা।

ভূমি, কার্গো দখল ও ঘর ভাংচুরের ঘটনায় কবিরহাট থানায় মামলা

চবিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ‘মুক্ত সংলাপ’ প্রত্যাখান শিক্ষার্থীদের, ষড়যন্ত্র না করতে দিল হুঁশিয়ারি

১৫ বছর পর মাতৃভূমিতে যুবদল নেতা হাসান নূরী

চবি উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক শামীম অথবা ড. আতিয়ারকে চান শিক্ষার্থীরা

ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার দায় নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন পলক

কোপা আমেরিকার সেরা একাদশে ৫ জনই আর্জেন্টিনার, ব্রাজিলের এক

গুলিবিদ্ধ কিশোরকে রিকশায় তুলতে গিয়ে দেখলেন নিজেরই সন্তান

নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করবে চবি কর্তৃপক্ষ

১২ দিন পর স্বল্প পরিসরে ট্রেন সার্ভিস চালু