রাত ১১:৫০, বুধবার, ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়া মা-ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিলেন মেধাবী জোবায়ের

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
জীবনের প্রতি আমাদের অনেকেরই বিতৃষ্ণা রয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হবে সব ছেড়ে কোনো এক নির্জনে কিংবা চিরনিদ্রায় পাড়ি জমাই। তেমনই এক নারী জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে শিশু সন্তান নিয়ে দৌড়াচ্ছেন রেললাইন ধরে। বিপরীতে আসছে একটি ট্রেন।

মুখোমুখি ট্রেন এবং সন্তান কোলে নারী। উদ্দেশ্য পৃথিবীকে বিদায় জানানো। আর এই দৃশ্য যখন আশপাশের লোকজন দেখলেন, তখন সময় ফুরিয়ে গেছে অবশ্য। কারণ তাকে থামাতে গেলে তারাও যাত্রী হতে পারেন পরপারের।

কিন্তু আর সবার মতো চিন্তা করেননি ১৮ বছরের কলেজ পড়ুয়া জোবায়ের রহমান নাফিউল। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও মা ও শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য ঝাপিয়ে পড়লেন জোবায়ের। কোলের অবুঝ শিশুটিকে বাঁচাতে পারলেও বাঁচাতে পারেননি মা-কে। বাঁচতে পারেননি নিজেও। জীবনবাজির এই যাত্রায় হেরে গেল জোবায়ের। নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করলেন ১৮ বছর বয়সের সাহস-ত্যাগ-আত্মউৎসর্গের কথা। একটি ছোট্ট ইতিহাস হয়ে থাকবে জোবায়েরের এই ত্যাগ।

ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধায়। ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে শহরের কলেজ পাড়ার গৃহবধূ রাজিয়া বেগম তার দেড় বছরের শিশু আবিতকে নিয়ে পার্বতীপুরগামী পদ্মরাগ ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিতে যান। তাদের-ই বাঁচাতে গিয়ে গৃহবধূর সঙ্গে ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন জোবায়ের। তবে শিশুটিকে পৃথিবীর আলোতেই ছেড়ে গেছেন তিনি। তার আগে মেস থেকে প্রাইভেট পড়ার জন্য বের হয়েছিলেন কলেজছাত্র জোবায়ের।

তবে জোবায়ের পৃথিবীর ভ্রমণ শেষ করলেও মানুষ তার এই বীরত্ব মনে রাখবে আরও বহুদিন। তার এমন মৃত্যুতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

জোবায়ের রহমান নাফিউল-এর বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী গ্রামে। এসএসসিতে গোল্ডের জিপিএ-৫ পাওয়া নাফিউল ইসলাম জোবায়ের গাইবান্ধা শহরের এসকেএস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম বর্ষে অধ্যায়রনরত ছিলেন। তার মৃত্যুর পর বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠেছে চারপাশ। ছেলের শোকে গৃহিণী মা জেবা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

এক প্রত্যক্ষদর্শী মর্মান্তিক ঘটনাটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আদর্শ কলেজ সংলগ্ন মাঝি পাড়া এলাকায় একটি ট্রেন টানা হুইসেল দিচ্ছে আর এক মহিলা কোলে শিশু সন্তানটিকে নিয়ে ট্রেনের নিচে লাফ দেওয়ার জন্য ট্রেনের দিকে দৌড়াচ্ছে। এ সময় একটি ছেলে কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে রেল লাইন পার হচ্ছিল। ছেলেটি দৌঁড়ে তাদের কাছে যান। এরই মধ্যে ট্রেনটি সেখানে পৌঁছে গেলে ছেলেটি কোলের সন্তানসহ মহিলাকে সরানোর জন্য টানাটানি শুরু করেন। তারপরই তাদের দু’জনকে ট্রেনটি ধাক্কা দেয়। এ সময় মহিলাটির কোলে থাকা শিশুটি ছিটকে রেল লাইনের পাশে পড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এরপর স্থানীয়রা তিনজনকেই গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জোবায়েরকে মৃত ঘোষণা করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজিয়াকে রংপুরে পাঠালে সেখানে তার মৃত্যু হয়। আর শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরিবারের কাছে দেয়া হয়।

এসকেএস ফাউন্ডেশন-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, জুবায়ের দীর্ঘদিন থেকেই  বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে মানবিক কাজ করতো। সে অত্যন্ত মেধাবী হওয়ার কারণে এসকেএস স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে বিনা খরচে পড়াশোনা করাতো। জোবায়েরের মৃত্যুতে পুরো প্রতিষ্ঠানে গভীর শোক নেমে এসেছে।

আজকের সারাদেশ/এমএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের প্রথম দিনে আয় প্রায় ৫ লাখ

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতরা পাবেন আজীবন চিকিৎসা ভাতা

বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য

কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকে ভাটা, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

বোয়ালখালী পৌসভা নানা অনিয়মে গিলে খেয়েছে ‘সিন্ডিকেট’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো দাপুটে আওয়ামী লীগের শাহ আমানত ও জান্নাত ট্রেডিং

আ.লীগের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত