আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
ভাগ্য পরিবর্তন করতে দেশান্তর। বিদেশে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। হাসপাতালে চিকিৎসার বিল পরিশোধ না করায় আড়াই বছর ধরে মরদেহ ফেলে রাখা হয় মর্গে। এমন করুণ পরিণতি শিকার বরিশালের গৌরনদী উপজেলার শাহজিরা গ্রামের শিপন হাওলাদার। তবে একটি মানবাধিকার সংস্থা ও দূতাবাসের প্রচেষ্টায় আড়াই বছর পর ব্রুনাই থেকে মরদেহ আসে দেশে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) গভীর রাতে শিপনের মরদেহ ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছে।
শিপনের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এনজিও ও স্থানীয়দের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ২০২০ সালের মাঝামাঝি ব্রুনাই গিয়েছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার শাহজিরা গ্রামের শিপন হাওলাদার। দুই বছর সেখানে মালি হিসেবে চাকরি করেন। ৪৪ বছর বয়সি এই বাংলাদেশি ২০২২ সালের শুরুর দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর ব্রুনাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিপন মারা যান। কিন্তু নিয়োগকর্তা হাসপাতালের কোনো বিল পরিশোধ করেননি। এরপর তার মরদেহ সেখানে পড়ে ছিল দুই বছর।
শিপন হাওলাদারের স্ত্রী খোরশেদা বেগম বলেন, “আমার স্বামীর মালিক (নিয়োগকর্তা) ভালো ছিলেন না। মারা যাওয়ার পরও সেখানে আমরা স্বামীর মরদেহ হয়ে পড়ে ছিল দুই বছরের বেশি। হাসপাতালের শিপনের চিকিৎসা বাবদ প্রায় ১৬ লাখ টাকা বিল ওঠে। সামর্থ্য না থাকায় নিজ খরচে আমরা মরদেহটাও দেশে আনতে পারিনি।”
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করে মরদেহ দেশের আনার উদ্যোগ নিতে বলে। পরে ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস উদ্যোগ নেয়।
দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের ফার্স্ট সেক্রেটারি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, “শিপন মারা যাওয়া অবস্থায় আনডকুমেন্টেড (নথিপত্রহীন) থাকায় তার হাসপাতালের প্রায় ১৬ লাখ টাকা বিল নিয়োগকর্তা পরিশোধ করেননি। এজন্য ইনস্যুরেন্স দাবিও করা যায়নি। সরকারি খরচে শিপনের মরদেহ দেশে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রদূত ম্যাডাম অনেক চেষ্টা করে হাসপাতালের বিল মওকুফের ব্যবস্থা করেছেন। ব্রুনাই থেকে মরদেহ আনতে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা লাগে। সেই টাকাও নিয়োগকর্তা দেয়নি।”
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের টাকায় মরদেহ আনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিপুল পরিমাণ বিল আটকে থাকা ও নিয়োগকর্তা ভালো না হওয়ার কারণেই মূলত মরদেহ আনতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়।”
আজকের সারাদেশ/জেএম