বিকাল ৪:৩৯, বুধবার, ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টিতে ভরপুর কাপ্তাই হ্রদ, ফিরছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:

দীর্ঘদিন ধরে একটি মাত্র ইউনিট চালু রেখেই চলছিল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। তবে গেল সপ্তাহের বৃষ্টিতে ‍সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদে বেড়ে যায় পানির পরিমাণ। তাই চালু করা হয় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আরও একটি ইউনিট।
ফলে ২৫ মেগাওয়াট থেকে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে প্রায় ৩৫ মেগাওয়াটে উন্নীত করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে সপ্তাহরে ব্যবধানে কেন্দ্রটির উৎপাদন ১৬৮ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে ২০২২ সালের শেষের দিকে জ্বালানি সংকটের কারণে বর্ষায় সব ইউনিট চালু রাথা হয়েছিল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ফলে চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে হ্রদের পানি কমে যায় রেকর্ড পরিমাণ। ফলে যেখানে কাপ্তাই হাইড্রোপাওয়ার প্লান্টের পাঁচটি ইউনিটের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াট সেখানে একটিমাত্র ইউনিট দিয়ে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পেরেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বা প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ৩ টাকা ৪৬ পয়সা, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিটের খরচ ৯ টাকা ১৭ ও ফার্নেস অয়েলের উৎপাদন খরচ ২২ টাকা ১০ পয়সা। অথচ কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ মাত্র ৩৫-৪০ পয়সা (সব ইউনিট সচল রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়া সাপেক্ষে)। এত কম মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হলেও হ্রদের পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা কমে যাওয়া, চট্টগ্রাম ওয়াসার সুপেয় পানি পরিশোধনে লবণাক্ততাজনিত জটিলতার কারণে চাইলেও অতিরিক্ত উৎপাদনে যেতে পারছে না জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি মাত্র ইউনিট দিয়ে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছিল। এক সপ্তাহ ধরে পার্বত্য এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় উৎপাদনের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে ৩০-৩৫ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়। তবে সোমবার বিকাল থেকে দুটি ইউনিট চালুর মাধ্যমে মোট ৬৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত নিয়মিত হলে ধীরে ধীরে বাকি ইউনিটগুলো চালুর মাধ্যমে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিডিবির চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও বিদ্যুতের সংকট ছিল। বর্তমানে আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা কমে এসেছে। তাছাড়া কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটির পরিবর্তে দুটি ইউনিটে উৎপাদন শুরু হয়েছে।’

কাপ্তাই হাইড্রোপাওয়ার প্লান্টের কন্ট্রোল রুমের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, কেন্দ্রটির ১ নম্বর ইউনিটে এক সপ্তাহ ধরে ৩০-৩৫ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। এর আগে প্রতিদিন উৎপাদন করা হতো ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সোমবার বিকালে ৪ নম্বর ইউনিট ২৪ ঘণ্টার জন্য উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। এ ইউনিটের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। তাছাড়া ১ নম্বর ইউনিটের উৎপাদন বাড়িয়ে ৩৭ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত নিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি হ্রদের পানি বাড়তে থাকলে অন্য তিনটি ইউনিটের উৎপাদনও ধারাবাহিকভাবে শুরু করা হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের কেন্দ্রগুলোয় ১৯ জুন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৭৭ মেগাওয়াট। ওইদিন বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল বিতরণ বিভাগের চাহিদা ছিল ১ হাজার ২৯২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এছাড়া সন্ধ্যা ৭টায় চাহিদা ছিল ১ হাজার ২৭৩ মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকলেও জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ আসায় চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলকে লোডশেডিংমুক্ত রাখা হয়েছিল।

বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, কাপ্তাই হাইড্রোপাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় কৃত্রিম হ্রদের মজুদ পানি দিয়ে। ১৯ জুন রুলকার্ভ (সময়সূচিভিত্তিক পানি ওঠানামার মাপ) অনুযায়ী পানি ধারণের কথা ছিল ৮০ দশমিক ৭৬ এমএসএল (মিন সি লেভেল)। যদিও ওইদিন ওয়াটার লেভেল ছিল ৭৪ দশমিক ২৩ এমএসএল। ২০ জুন সন্ধ্যা ৭টায় কাপ্তাই হ্রদের রুলকার্ভ ৮১ দশমিক শূন্য ৩ এমএসএল হলেও পানির লেভেল বেড়ে হয়েছে ৭৫ দশমিক ২০ এমএসএল। ধারাবাহিকভাবে রুলকার্ভের বিপরীতে পানির লেভেল বাড়তে থাকায় উৎপাদন বাড়ছে কেন্দ্রটিতে। রুলকার্ভ ৭৭ এমএসএল পার হলেই ৩ নম্বর ইউনিট চালু করে দেয়া হবে। রুলকার্ভ ৮০ পেরোলেই সব ইউনিট চালুর মাধ্যমে প্রতিদিন ২০০ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীরা। পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় এক সপ্তাহের মধ্যেই রুলকার্ভ বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

চট্টগ্রামের ভূ-উপরিস্থ সুপেয় পানির সংগ্রহের প্রধান উৎস কর্ণফুলী নদী। এ নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে পরিশোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। উজান থেকে কাপ্তাই হাইড্রোপাওয়ার প্লান্টের নিয়মিত পানিপ্রবাহ না থাকলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে পানি সংগ্রহের উৎসমুখ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কয়েক মাস ধরে দৈনিক ১২ ঘণ্টায় একটিমাত্র ইউনিটে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে ওয়াসার কয়েকটি প্লান্টের পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকশ গুণ বেড়ে যায়। এ কারণে শুষ্ক মৌসুমে কর্ণফুলী নদীতে পানিপ্রবাহ বজায় রাখতে ভরা মৌসুমেও পানি ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন করতে হয় বিদ্যুৎ বিভাগকে। যদিও সর্বশেষ অক্টোবর-নভেম্বরে জ্বালানি সংকটের কারণে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল কাপ্তাই হাইড্রোপাওয়ার প্লান্ট কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে কাপ্তাই হাইড্রোপাওয়ার প্লান্টের ম্যানেজার এটিএম আবদুজ্জাহের বলেন, ‘পানির লেভেল বাড়তে থাকায় আরো একটি ইউনিটে উৎপাদন চালু করা হয়েছে। নিয়মিত বৃষ্টিপাত হলে এ কেন্দ্রের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হবে।’ কম মূল্যে উৎপাদন হওয়ার কারণে কাপ্তাই হাইড্রোপাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তিনি।

আজকের সারাদেশ/২৩জুন/এসএম

সর্বশেষ সংবাদ

সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের প্রথম দিনে আয় প্রায় ৫ লাখ

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতরা পাবেন আজীবন চিকিৎসা ভাতা

বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য

কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকে ভাটা, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

বোয়ালখালী পৌসভা নানা অনিয়মে গিলে খেয়েছে ‘সিন্ডিকেট’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো দাপুটে আওয়ামী লীগের শাহ আমানত ও জান্নাত ট্রেডিং

আ.লীগের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত