সন্ধ্যা ৭:৫৮, বুধবার, ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পশুরহাটে রাজ-জসিম, মানুষ তুলছে সেলফি

এম মোরশেদ, চট্টগ্রাম

আর মাত্র পাঁচ দিন পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির এই ঈদকে ঘিরে ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম শহরের স্থায়ী-অস্থায়ী নয়টি পশুর হাট। বাজারগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ট্রাকে করে আনা হচ্ছে গরু-ছাগল। তবে এখনো বাজারগুলোতে ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি। তবে কাল বা পরশু পুরোপুরিভাবে বেচা-কেনা জমে উঠবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে নগরীর ষোলশহর এলাকায় অবস্থিত গরু বাজার বিবিরহাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে কিছুক্ষণ পর পর বাজারের সামনে এসে থামছে গরু ভর্তি ট্রাক। বাজারের পাশে নির্দিষ্ট স্থান ‍দিয়ে একের পর এক নামিয়ে গরুগুলোকে সারিবদ্ধভাবে সাজানো হচ্ছে। একই সাথে ক্রেতার পাশাপাশি ভিড় জমাচ্ছে দর্শনার্থীরাও । এদের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ। বন্ধু বা স্বজনদের নিয়ে গরু কিনতে নয়, আসছেন দেখতে।

জানা গেছে, গেল বছরে নগরীর এই স্থায়ী পশুর হাটটি কোরবানি উপলক্ষে নিলামে ইজারা হলেও এবার পযাপ্ত দরদাতা না পাওয়া ইজারা দেওয়া যায়নি। ফলে পুরো হাটটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে। সাধারণত শনি ও মঙ্গলবার এ দুদিন বসলেও কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে আজ থেকে রাত-দিন সব সময় বেচাবিক্রি হবে।

বাজারের ভেতরে ঢুকতেই দেখা হয় হামজারবাগ থেকে আসা কামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি পাঁচ বছর বসয়ী ছেলে ইয়াসিরকে কোলে চড়িয়ে গরু দেখাতে নিয়ে আসছেন, কোলে থাকা ছেলেকে নিয়ে তুলছেন গরুর সাঙ্গে সেলফি। কামাল বলেন, ‘ছেলে গরু দেখতে চাচ্ছে তাই বাজারে নিয়ে আসছি। গরু আরও পরে কিনব।’

এই পশুরহাটে ‘রাজ, জসিম ,কৃষ্ঞমালাসহ বিভিন্ন নামের ১৫ টি বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছেন মাগুরার কবির বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘গরু বড় করতে যে পরিমাণ টাকার খারাব খাওয়ানো হয়েছে, একটু বেশি দামে যদি বিক্রি করা না গেলে পোষাবে না। আশা করছি আমরা ভাল দাম পাব। গরু বিক্রি করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে আরাম আয়েসে খাব। তারপর মনকে বুঝাতে পারব যে, গরুগুলো যে এত কষ্ট করে বড় করেছি তার সুফল পেয়েছি। তবে আজকের যে হাট সেটি দেখে বুঝা যাবে দাম কেমন পাব। ‘

একইভাবে নিজের খামারে মোটা-তাজা করা ১৯টি গরু নিয়ে আসেন চাপাইনবাবগঞ্জ রাহুল বলেন, ‘এবারের বাজারে তেমন দাম উঠছে না। প্রায় ৭শ কিলোমিটার দূর থেকে একটু বেশি লাভের আশায় চট্টগ্রামের মাটিতে অনেক টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে গরু নিয়ে এসেছি। নিজেরা থাকছি-খাচ্ছি, জায়গার ভাড়া দিছি । এবারও আমাদের লুকসান হবে মনে হচ্ছে।’

বেপারিরা জানান, এক থেকে দেড় মণ ওজনের গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, দুই থেকে চার মণ ওজনের গরুর দাম দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা, পাঁচ মণ ওজনের গরুর দাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা, ১০ মণ বা তার বেশি ওজনের গরুর দাম চার থেকে ছয় লাখ টাকায় পাওয়া যাবে। 

বড় ভাইয়ের সঙ্গে গরু কিনতে আসা ইব্রাহিম মুনতাছিল বলেন, ‘প্রথম ভাইয়া সাথে গরু কিনতে এসেছি। বাজারের গরু দেখে ভাল লাগছে। তবে দাম তো অনেক বেশি।’

সেলিম উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘গরু কিনতে এসে দেখি অনেক দাম। মাঝারি সাইজের একটি গরু দাম চাচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। ক্রেতা তো আসছে বাজারে। কিন্তু দরদামে হচ্ছে না। আগের বছরগুলো থেকে এবার দাম দ্বিগুণ।’

হাট তদারকির দায়িত্বে থাকা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা বিক্রির জন্য হাটে পশু নিয়ে আসছেন। উপজেলার হাটগুলোতে পশু বিক্রি আগেভাগে জমে উঠলেও নগরের হাটগুলোতে কোরবানির কয়েকদিন আগে জমে ওঠে। নগরের বাসিন্দাদের পশু পালন ও রাখার পর্যাপ্ত স্থান নেই। এ কারণে সবাই দুই-তিন দিন আগে কিংবা আগের দিন পশু কেনেন।’

চসিকের অনুমতি পাওয়া হাটগুলো হলো- চসিকের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নূর নগর হাউজিং এস্টেট এলাকায় কর্ণফুলী গরু বাজার, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের খেজুরতলা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি মাঠ, একই ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, মুসলিমাবাদ টিকে গ্রুপের খালি মাঠ ও মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড় এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোড সিডিএ বালুর মাঠ।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এবার নগরের স্থায়ী-অস্থায়ী ৯টি হাটের মধ্যে সাগরিকা ও নূর নগর গরুর হাটে ক্যাশলেস লেনদেন হবে। হাট দুটিতে ডিজিটাল লেনদেন বুথ চালু রয়েছে।  কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সেবা চালু করেছে। বাজারে দূর-দূরান্ত থেকে পশু কেনাবেচা করতে মানুষ আসেন। এটাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধচক্র জাল নোট সরবরাহ, ডাকাতি, ক্রেতাদের টাকা ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ডিজিটাল হাটে সব ধরনের আর্থিক সেবা ডিজিটালি হবে বিধায় এই অপরাধ চক্রের কার্যক্রম কমে আসবে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রাম নগরে ও ১৫ উপজেলায় ২২২টি স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে স্থায়ী ৬০ ও অস্থায়ী ১৬২টি। নগরে নয়টি হাটে পশু বেচাকেনা চলছে। এর মধ্যে তিনটি স্থায়ী ও ছয়টি অস্থায়ী হাট। বাকীগুলো জেলার ১৫ উপজেলায়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, ‘চট্টগ্রামে এবার ঈদুল আজহায় ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি পশু কোরবানি দেওয়া হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা ও নগরের আট হাজার ২২০টি খামারে কোরবানিযোগ্য পশু আছে আট লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি। সে হিসেবে ঘাটতি থাকবে ৩৭ হাজার ৫৪৮টি। ঘাটতি পশু মৌসুমি ব্যবসায়ী তথা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিক্রির জন্য আনা পশুতে পূরণ হবে।’

আজকের সারাদেশ/২৪জুন/এসএম/এএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের প্রথম দিনে আয় প্রায় ৫ লাখ

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতরা পাবেন আজীবন চিকিৎসা ভাতা

বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য

কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকে ভাটা, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

বোয়ালখালী পৌসভা নানা অনিয়মে গিলে খেয়েছে ‘সিন্ডিকেট’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো দাপুটে আওয়ামী লীগের শাহ আমানত ও জান্নাত ট্রেডিং

আ.লীগের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত