আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রাম মহানগরীতে মোট ২৬টি পাহাড়ে মোট ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার বসবাস করছে। পাহাড়গুলোর মধ্যে রেলওয়ের ৭টি, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২টি, সরকারি খাস ৩টি এবং গণপূর্তের ৩টি। এসব পাহাড় থেকে বসতি উচ্ছেদের পর আবারো দখল হয়ে যায়। এসব এসব পাহাড়ের বসতিগুলো থেকে ভাড়া তোলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এবার পাহাড় দখলদার তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। পাশাপাশি পাহাড়ে অবৈধ বসতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎও পানির সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শোকজ করার পাশাপাশি অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউস অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৭ তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সকল সরকারি সংস্থা ও দপ্তরের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, “পাহাড়গুলো থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে হলে পাহাড়ের মালিকানায় থাকা সংস্থাগুলোকে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে। যাদের পাহাড়, তাদেরকে সক্রিয় হতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর শুধু মামলা করলেই চলবে না। তদারকিও করতে হবে। আমার সর্বোচ্চ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারি।”
পাহাড়গুলো মধ্যে সবচেয়ে বেশি মালিকানায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। সংস্থাটির প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (পূর্বাঞ্চল) সুজন চৌধুরী বলেন, “সম্প্রতি সেখানে এক বিদেশির পরিদর্শনের জন্য আমাদের কাছে চিঠি আসে। মূলত সেখানকার প্রকল্প নেওয়া জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে রাস্তা হয়েছে। ড্রেনেজ সিস্টেম পর্যন্ত আছে। অবৈধ দখলদের জন্য প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। বাটালি পাহাড়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি পৌঁছে গেছে কীভাবে! সেখানে বিদেশি সংস্থার অর্থায়নে কাজও হয়েছে। আমাদের না জানিয়ে, তারা সেখানে প্রকল্প নিয়েছে।”
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “সেখানে রাস্তা বা ড্রেনেজ ব্যবস্থার প্রকল্পটি আগে নেওয়া হয়েছিল। আমরা সেখানকার মানুষের জন্য শুধু কিছু ফ্যাসিলিটি দিয়েছি। আমরা প্ল্যান করছি, ২০ কাঠা জমিতে একটি আবাসন প্রকল্প নেওয়ার। সেখানে পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণদের এনে পুনর্বাসন করা হবে।”
তিনি বলেন, “লালখানবাজারের মতিঝর্ণাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। এখানে অনেক বছর ধরে মানুষ বসবাস করছে। তাদের উচ্ছেদ করা কঠিন। তারা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি; সবকিছু পেয়েছেন।”
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, “আমরা মামলা করি। আসামিরা জামিন নিয়ে বের হয়। অনেক সময় দেখা যায়, প্রকল্প অনেকদূর যাওয়ার পর আমরা খবর পাই। এক্ষেত্রে পাহাড়ের মালিকানায় থাকা সংস্থাগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে।”
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সচিব শাব্বির ইকবাল বলেন, “শুধু মহানগরীর পাহাড়গুলোতে নজর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়গুলো কাটা হচ্ছে। সেখানেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”
পুলিশের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের ডিআইজি নূরে আলম মিনা, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার নিষ্কৃতি চাকমা। তাদের বক্তব্য, “পুলিশ নিয়মিত অভিযানসহ সবসময় সহায়তা করে থাকে। প্রশাসন যদি কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানেও পুলিশের সর্মথন থাকবে।”
পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বলেন, “অবৈধ বসিত কীভাবে ইউটিলিটি সার্ভিস পায়? আমি নিজেও আবেদন করেছি, কত ধরনের কাগজপত্র দিতে হচ্ছে। তারা কীভাবে পায়? নিজেদের সম্পত্তি সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারি সংস্থাগুলো। এটি করতে না পারা দায়। এ দায়ও নিতে হবে। আমার বাংলোর নিচে থেকে ২০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করেছি। সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক নেতারা অবৈধ বসতি ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা পকেটে ঢুকায়। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এসব পাহাড়ে মাদক, জুয়া, মারামারি হয়। ফলে আইনশৃঙ্খলা অবনতি হয়। সবাই মিলে উচ্ছেদের জন্য একটা ডেড লাইন দেন। আমরা কঠোর হব, আমরা পারব।”
বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, “রেলওয়ে, চসিক ও পরিবেশ; তিন সংস্থা মিলে সমন্বয় করে অবৈধ দখলদারদের তালিকা করুন। ইউটিলিটি সংযোগ যারা দিয়েছে, তাদের তালিকা করা হোক। সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাহাড়গুলো দখলমুক্ত রাখা এবং সুরক্ষিত করা মালিকদের দায়িত্ব। এটি অবহেলা করা যাবে না।”###
এসএম