সকাল ১০:০৯, বুধবার, ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সলেমার সহায়সম্বল কেড়ে নিয়েছে বন্যা, তাই রেললাইনেই সংসার

হাবীব আরাফাত, চট্টগ্রাম

সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়াখালের মুখ এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসাড়ক ক্রস করেছে নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন। সেই রেললাইন ধরে উত্তর-পূর্ব দিকে মিনিট দুয়েক হাঁটলেই চোখে পড়বে রেললাইনে আলাদা তাবু গেড়ে তৈরি কয়েকটি বসতি। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জরাজীর্ণ তাবুতে বাঁস ৪৫ বছর বয়সী সলেমা খাতুনের। দুই কন্যা ও এক ছেলের জননী সলেমার ঘর রেললাইনের কয়েক গজের মধ্যেই। দুই কন্যার একজনকে বিয়ে দিয়েছেন, অন্যজন স্থানীয় কর্ণেল (অব:) অলি আহমদ বীর বিক্রম ডিগ্রি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। একমাত্র ছেলে স্থানীয় বাজারে মুদি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ নিয়েছেন সম্প্রতি।

সলেমার স্বামী আবুল কাশেম ইটভাটার শ্রমিক, মাসিক ১০ হাজার টাকা মজুরি তার। এই আয় দিয়েই  কোনোভাবে চলতো সংসার। গত ৮ আগস্ট হঠাৎ ছেলের প্রচণ্ড পেটে ব্যথা হওয়ায় তাকে নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে যান তিনি। পরদিন সেখান থেকে ফিরে দেন ঘরে হাঁটু পানি। দ্রুত পানি বাড়তে থাকায় কিছু কাপড়চোপড় নিয়ে রেললাইনে তাবু গাড়েন তিনি। একপর্যায়ে পুরো ঘরটায় পানির নিচে চলে যায়। রেললাইনের যে অংশে তিনি ও তার প্রতিবেশী কয়েকজন তাবু গেড়েছেন, সেই অংশটা তুলনামূলক উঁচু। বন্যার পানি ওই উঁচু অংশও স্পর্শ করেছে। এখন পানি কমলেও ঘরের মেঝে পানির নিচে। তাই ঘর সংস্কার শুরুর সুযোগও নেই। ৪৫ বছরের জীবনে এমন বন্যা আর দেখেননি সলেমা খাতুন। বন্যায় নিজের সহায়সম্বল হারানোর গল্প বলতে বলতে কণ্ঠ জড়িয়ে আসে তার। চোখ বেঁয়ে ঝরে পড়ে অবাধ্য অশ্রু। 

সলেমা খাতুন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘জিনিসপাতি কিছু আনতে পারিনি, যা পেরেছি কাপড়চোপড় নিয়ে সাঁতরে চলে আসছি। পরে পানি কমার পর একটা আলমারি ও খাটের কিছু অংশ বের করেছি সাঁতরে। যতদিন পানি পুরোপুরো না কমে ততদিন এভাবেই থাকতে হবে।’

তিনি জানান,  রাতে তাবুর নিচে রেললাইনের ওপর খাটের তক্তা বিছিয়ে স্বামী-সতান নিয়ে ঘুমান। কলেজ পুড়ায়া মেয়ে জান্নাতুল মাওয়াকে রেখেছেন দুই কিলোমিটার দূরের নানার বাড়িতে। তবে ঘরছাড়া হওয়ার পর থেকে সবার খাওয়া দাওয়া তার (সলেমা) বাবার বাড়িতেই হয়। 

এখন পর্যন্ত দুটি সংগঠনের দুই প্যাকেট ত্রাণ পেয়েছেন বলে জানান তিনি। 

সালেমা জানান, বাসা থেকে পুরোপুরি পানি না যাওয়া পর্যন্ত রেললাইনই ঠিকানা। তবে পানি নামলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরটি সংস্কারে যে অর্থ প্রয়োজন তার সিকিভাগও জমা নেই। এমনকি ইটভাটার শ্রমিক আবুল কাশেমও এখনো গত মাসের বেতন পাননি। কারণ বন্যায় ইটভাটাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাম্প্রতিক বন্যায় সলেমার মত এভাবে ঘর হারিয়েছেন সাতকানিয়ার আরো অন্তত আড়াই হাজার পরিবার। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো ৩ হাজার ঘর-বাড়ি।

চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানান, বন্যায় এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৯ হাজার ১৮৫ পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো ১৮ হাজার ৮৮৫ টি ঘর। সব মিলিয়ে সাড়ে ৮ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

এছাড়াও সাড়ে ৩ শ কিলোমিটার পাকা ও ৩৭০ কিলোমিটার কাচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায়। নষ্ট হয়েছে ১১ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমির ফসল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার কৃষক। ট্রলার ও বিভিন্ন ছোটখাটো নৌযানসহ বন্যায় তলিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে ৬৯ লাখ টাকার মাছ৷ প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি ৩১ লাখ টাকার। 

আজকের সারাদেশ/১৫ আগস্ট/এএইচ/এসএম

সর্বশেষ সংবাদ

সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের প্রথম দিনে আয় প্রায় ৫ লাখ

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতরা পাবেন আজীবন চিকিৎসা ভাতা

বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য

কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকে ভাটা, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

বোয়ালখালী পৌসভা নানা অনিয়মে গিলে খেয়েছে ‘সিন্ডিকেট’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো দাপুটে আওয়ামী লীগের শাহ আমানত ও জান্নাত ট্রেডিং

আ.লীগের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত