রাত ৮:২৬, বৃহস্পতিবার, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চবি উপাচার্যের মেয়েকে টাকা ধার দিয়ে বিপাকে শিক্ষক!

আজকের সারাদেশ রিপোর্ট:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের মেয়ে রিফাত মোস্তফা টিনাকে আড়াইলাখ টাকা ধার দিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মো. আসহাব উদ্দিন খালেদ।

আইইআর থেকে এক বছর আগে অবসরে যাওয়া এই শিক্ষকের অভিযোগ, পাওনা টাকা ফেরত পেতে বারবার ফোন দিলেও ধরছেন না টিনা। গত সোমবার পাওনা টাকার ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত তিনমানে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে দুই দফায় টিনাকে চিঠি পাঠিয়েছেন আসহাব উদ্দিন। চিঠি দুটি তিনি পাঠান উপাচার্যের দপ্তরে।

প্রথমে ২ জানুয়ারি পাওনা টাকা ফেরত দিতে চিঠি পাঠান আসহাব উদ্দিন খালেদ । কিন্তু এই চিঠি দেওয়ার পর টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেছেন এই শিক্ষক। সর্বশেষ ১৪ মার্চ তিনি পুনরায় টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি পাঠান।

চিঠির কপি

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ আত্মীয়করণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে থেকে নিয়োগ পাওয়ায় আইইআরের শিক্ষকেরা বেশ কিছু বছর ধরে টানাপোড়নে ছিলেন। একবার তাঁদের পুনরায় কলেজে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর আন্দোলনে নামেন এই শিক্ষকেরা। শিরীণ আখতার উপাচার্য হওয়ার পর তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা হয়। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় আইইআরের শিক্ষকদের আইনি মোকাবিলাসহ বিভিন্ন দেনদরবারের খাতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। ওদিকে অবসরের অপেক্ষায় থাকা আসহাব উদ্দিনের কাছে গ্রামের জমি বিক্রী করা বাবদ বেশ কিছু টাকা ছিল। তাঁর কাছ থেকে চার সহকর্মী কয়েক লাখ টাকা ধারও নেন। আসহাব উদ্দিনের কাছে টাকা থাকার বিষয়টি জানতেন আইইআরের আরেক শিক্ষক উদিতি দত্তও।

টিনার কাছে পাঠানো চিঠিতে আসহাব উদ্দিন উল্লেখ করেন, ‘আপনার মা অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের অনুরোধে ও উদিতি দত্তের সুপারিশে আপনাকে প্রথমে দুই লাখ টাকা হাওলাত দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে গত বছরের ২৪ এপ্রিল আপনার বাসায় গেলে আপনি আমার কাছ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা হাওলাত নেন। অর্থাৎ সর্বসাকুল্যে আপনি আমার কাছ থেকে আড়াইলাখ টাকা হাওলাত নেন। প্রথম দুই লাখ টাকা পুরাতন আইইআর ভবনে উদিতি দত্তের সামনে আপনার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আর শেষ পঞ্চাশ হাজার টাকা আপনার বাসায় আপনার মায়ের সামনে দিয়েছিলাম।’

টিনার সঙ্গে কোনো পূর্ব পরিচয় ছিল না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন আসহাব উদ্দিন। তবুও কি কারণে টাকা ধার দিলেন এমন প্রশ্নে আসহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার হাতে জমি বিক্রীর টাকা ছিল তখন। আমি তাই চার সহকর্মীকে কয়েক লাখ টাকা ধার দিয়েছিলাম। তখন উপাচার্যের অনুরোধে ও উদিতি দত্তের সুপারিশে আমি টিনাকেও আড়াইলাখ টাকা ধার দিই। পাশাপাশি একই সময়ে উপাচার্যের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত এতিমখানার জন্য এক লাখ টাকা দানও করেছিলাম। এর মধ্যেই আমার সহকর্মীরা টাকা ফেরত দিলেও টিনা এখনো দেননি। ফোন করলেও ধরেন না। টাকা ফেরত পেতে তাই চিঠি দিতে বাধ্য হয়েছি। টিনার বাসা চিনলেও ঠিকানা জানি না। সেজন্য তাঁর মায়ের ঠিকানায় দুই দফায় চিঠি পাঠাইছি।’

চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার

এদিকে টিনাকে পাঠানো আসহাব উদ্দিনের দুটি চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরই এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়-কানাঘুষা।

প্রথম চিঠির পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আরও কয়েকজনকে নিয়ে উদিতি দত্ত আসহাব উদ্দিনের ক্যাম্পাসের বাসায় যান। এরপর চিঠিটা প্রত্যাহার করে নিতে দুজনে আসহাব উদ্দিনকে গভীর রাত পর্যন্ত অনুরোধসহ দেন-দরবার ও হুমকি দেন। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় আছেন আসহাব উদ্দিন। পরে ৮ জানুয়ারি আবারও বাসায় গিয়ে আসহাব উদ্দিনকে হুমকি দেওয়া হয়।

আসহাব উদ্দিন বলেন, ‘শুনেছি অনেকের কাছ থেকেই নাকি চাকরিসহ নানা সুযোগ দেওয়ার কথা বলে টিনা টাকা নিয়ে ফেরত দেননি। আমি এখন খুবই আর্থিক সংকটে আছি। আমি তাই টাকাটা এখনই ফেরত পেতে চাই।’

অবশ্য টিনাসহ উপাচার্যের পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ক্যাম্পাসে বহুদিন ধরেই ‘ওপেন সিক্রেট’। বিশেষ করে টিনা ও উপাচার্যের ভাতিজা
আজফার কামাল চৌধুরী শাওনের নাম এসেছে বারবার। বিশ্ববিদ্যালের কেউ না হলেও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করেও দুই বছর আগে সমালোচিত হয়েছিলেন টিনা।

গত বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত পাঁচটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। এসব ফোনালাপ ছিল উপাচার্য শিরীণ আখতারের ব্যক্তিগত সহকারী খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন ও হিসাব নিয়ামক শাখার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আহমদ হোসেনের সঙ্গে দুজন নিয়োগ প্রার্থীর। খালেদ মিছবাহুল উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বেও ছিলেন। এসব ফোনালাপেও উপাচার্যের পরিবারের সদস্যদের নামও এসেছিল। এরপর একই বছরের আগস্ট মাসে টাকার বিনিময়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে অফিসার সেলের গ্রন্থাগার সহকারী মানিক চন্দ্র দাসের সঙ্গে দুই চাকরিপ্রত্যাশীর দুটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব অডিওতে বারবার বলা হয় ‘টাকা দিতে হবে ঊর্ধ্বতনদেরও।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও দুইজন কর্মকর্তা মনে করেন এই ঊর্ধ্বতন বলতে প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার পাশাপাশি উপাচার্যের পরিবারের সদস্যদেরও ইঙ্গিত করা হয়েছে।

তাঁরা বলেন, রবিনের সঙ্গে উপাচার্যের মেয়ে টিনা ও ভাতিজা শাওনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। উপাচার্যের বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে রবিনের সঙ্গে তাঁদের হাসিমুখে তোলা ছবিও শাওন ফেসবুকে শেয়ারও করেছিলেন। কিন্তু অডিও ফাঁসের পর সেই ছবি ফেসবুক থেকে মুছে দেন তিনি।

অডিও ফাঁসের ঘটনায় কর্মকর্তা রবিন ও দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এই ঊর্ধ্বতনদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

টাকা ধার নিয়ে ফেরত না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রিফাত মোস্তফা টিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ সংবাদ

কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকে ভাটা, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

বোয়ালখালী পৌসভা নানা অনিয়মে গিলে খেয়েছে ‘সিন্ডিকেট’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো দাপুটে আওয়ামী লীগের শাহ আমানত ও জান্নাত ট্রেডিং

আ.লীগের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

পাহাড়ে সেনাশাসন নয়, অপতৎপরতা প্রতিহত করতেই সেনাবাহিনী

চবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপন

যুবদল নেতা শহিদুল ইসলাম শহিদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা