সন্ধ্যা ৬:৩২, বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইফতারের পাতেও মেজবানের স্বাদ

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:

পোস্তদানা, মিষ্টি জিরা, নারকেল, বাদামবাটা। সঙ্গে আরও কয়েক পদের মশলায় গরুর মাংস মেখে বড় ডেকচিতে ভরে সরিষার তেলে রান্না। মূল পদ গরুর হলেও অবশ্য রান্নার ধরণ একেবারেই আলাদা। রান্নার ডেকচি থেকে চুলা-তাও ভিন্ন। বিশেষভাবে তৈরি এই রান্নাকেই বলে মেজবানি মাংস। সেই মাংসের সঙ্গে ভাত, নলার ঝোল, মাংসের ছাঁটছুট আর ডাল দিয়ে লাউয়ের তরকারি মাটির শানকিতে ভরে খাওয়া-আহ কি স্বাদ!

চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই খাবারের চাহিদা থাকে সারাবছরই। বাইরে থেকে কেউ চট্টগ্রামে এলে একবার মেজবানের স্বাদ নিতে চাইবেনই। সেই খাবার এখন ঢুকে পড়েছে ইফতারের পদেও। দিনভর রোজা শেষে তৃপ্তি ভরে খেতে তাই অনেকেই ঢুঁ মারেন মেজবানেরে মাংস আছেন এমন রেস্তোরাঁ আর দোকানে। কেউবা আবার ঘরেও নিয়ে আসেন মেজবানের মাংস।

নগরের চৌমুহনী এলাকার পীরবাড়ি রোডের অস্থায়ী দোকানগুলোর মেজবানি মাংসের সুনাম আছে পুরো চট্টগ্রামেই। বুধবার বিকেলে সেই রোডে ঢুকতেই নাকে এল মেজবানি মাংসের সুগন্ধ। রাস্তার দুই পাশেই সারি সারি মেজবানের মাংসের দোকান। বেশির ভাগ দোকানেই ‘স্পেশাল রান্না করা মেজবানের মাংস’ ব্যানার লাগানো। সেই দোকানগুলোর টেবিলে ধরে থরে সাজানো ছোট বড় বাটি। অন্য পাশে মেজবানের মাংসের বড় বড় ডেকচি। হালকা আঁচে মাংস গরম রাখার ব্যবস্থাও আছে। ক্রেতা এলে হাঁড়ি থেকে গরম মাংস ভরা হয় বাটিতে। অন্য বাটিতে ভরে নিতে পারবেন ছোলার ডালও।

পীরবাড়ি রোডের মেজবানি মাংস বিক্রির শুরুটা যাদের হাত দিয়ে তাদের অন্যতম মোহাম্মদ মনজুর বাবুর্চি। তাঁর বাবা আবদুল খায়ের ছিলেন চট্টগ্রামের এক সময়ের বিখ্যাত বাবুর্চি। বাবার কাছ থেকে মেজবানের মাংস রান্নার হাক পাকান মনজুর বাবুর্চি। এখন পুরো দেশেই মেজবানের মাংস রান্নার জন্য ডাক পড়ে তাঁর।

মনজুর বাবুর্চি বলেন, ‘২০০৩ সালে ছোট্ট দোকানে মেজবানের মাংস বিক্রি শুরু করি। ধীরে ধীরে বাড়ে প্রসার। দোকানের পেছনের জায়গায় রান্না করি মেজবানি মাংস। এখন প্রতিদিন ৪০-৫০ কেজি মেজবানের মাংস বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের নানা জায়গা থেকে মানুষ এসে নিয়ে যান মাংস।’

মনজুর বাবুর্চির কথার প্রমাণ মেলে একটু পরেই। প্রায় ৮-৯ কিলোমিটার দূরের নগরের হালিশহর এলাকা থেকে মনজুর বাবুর্চির দোকানে মেজবানের মাংস কিনতে এসেছিলেন শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এখানে মেজবানের পুরোনো স্বাদ পাওয়া যায়। বাসার মানুষেরা ইফতারে মেজবানের মাংস খাওয়ার আবদার করেছে। সেজন্য এলাম।

পীরবাড়ি রোডের মুখেই মেজবানি মাংস বিক্রি করছিলেন আব্দুল খালেক বাবুর্চি। তিনি বলেন, ২১ বছর ধরেই মেজবানি মাংস বিক্রি করছি। আগে নানা অনুষ্ঠানকেন্দ্রীক মেজবানি মাংস খেত মানুষ। তবে কয়েক বছর ধরে ইফতারেও মানুষ মেজবানি মাংসের স্বাদ নিচ্ছে। চাহিদা তাই আগের চেয়ে বেড়েছে।’

আগে শুধু পীরবাড়ি রোডকেন্দ্রীক মেজবানি মাংসের অস্থায়ী দোকানগুলো থাকলেও এখন তা নগরের পাঠানটুলী, শেখ মুজিব রোড, বাদামতলী এলাকা পর্যন্ত দোকান দেখা যায়। গত কয়েক বছরে অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোও ইফতারির বিশেষ পদ হিসেবে মেজবানি মাংস বিক্রি করছে। বারকোড রেস্টুরেন্ট গ্রুপ একাই ‘মেজ্জান হাইলে আইয়ন’ নামে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মেজবানের মাংস বিক্রির কয়েকটি রেস্তোরাঁ খুলেছে। ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে আছে ‘মেজ্জাইন্নাবাড়ি’ নামের আরও একটি মেজবানি মাংসের রেস্তোরাঁ।

জামালখানের মেজ্জান হাইলে আইয়ন-এ ইফতার করতে এসেছিল বন্ধুদের একটি দল। সেই দলের একজন শফিক আহমদ বলেন, ‘বাসায় রান্না করা মেজবানি মাংসে আসল স্বাদ মেলে না। বন্ধুদের নিয়ে তাই ইফতারিতে মেজবানি মাংস খেতে রেস্তোরায় চলে এলাম।’

বিভিন্ন রেস্তোরা ও অস্থায়ী দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরুর মাংসের দাম বাড়ায় তাঁদেরও এখন বেশি দামে মেজবানি মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে। রেস্তোরাঁ ও দোকানভেদে প্রতি কেজি মেজবানি মাংস ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ডাল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। আবার চাইলে জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়ও নিতে পারছেন মেজবানি মাংস, ভাত ও ডালের স্বাদ।

সর্বশেষ সংবাদ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো দাপুটে আওয়ামী লীগের শাহ আমানত ও জান্নাত ট্রেডিং

আ.লীগের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

পাহাড়ে সেনাশাসন নয়, অপতৎপরতা প্রতিহত করতেই সেনাবাহিনী

চবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপন

যুবদল নেতা শহিদুল ইসলাম শহিদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা

ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলেম-ওলামাদের ঢল