আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ফের নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। রোববার (১৮ জুন) সকালে পাহাড়ি ঢলের পর হালদা নদীর কয়েকটি স্পটে সামান্য পরিমাণ নমুনা ডিম পেয়েছেন জেলেরা। এর আগে ১৭ মে হালদার কয়েকটি পয়েন্টে নমুনা ডিম ছেড়েছিল মা মাছ।
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া জো’র মধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টির পর রোববার ভোরে পাহাড়ি ঢল আসায় ডিম ছাড়ার কিছুটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।
সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে প্রবল পাহাড়ি ঢল ও শীতল আবহাওয়ায় কার্প জাতীয় মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। নমুনা ডিম মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য প্রস্তুতির আভাস। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়ে।
হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হালদা নদীতে মেজর কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন মৌসুম শেষের দিকে এখন। এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রজনন মৌসুমের কয়েকটি জোঁ চলে গেলেও হালদায় কার্পজাতীয় মাছের কাঙ্ক্ষিত ডিমের দেখা মেলেনি। কিন্তু বিৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ জোঁ’র মধ্যে রোববার সকাল থেকে পাহাড়ি ঢল আসতে শুরু করায় নদীর আজিমার ঘাটা, রামদাশসহ বিভিন্ন পয়েন্টে আবারও নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ।’
রোববার রাতের মধ্যেই পুরোদমে মা মাছ ডিম ছাড়বে বলে আশা সংগ্রহকারীদের। এবার ১৪ দলে দুজন করে মোট ২৮ জন জেলে হালদা থেকে ডিম সংগ্রহের প্রস্ততি নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া অমাবস্যা জোঁ থেকেই মা মাছের ডিম ছাড়ার আশায় নদীতে অপেক্ষা করছেন তারা।
হালদা ডিম সংগ্রহকারী সমিতির সভাপতি মো. শফিউল আলম বলেন, ‘আমরা সবকটা জোঁতেই নদীতে ডিমের অপেক্ষা করে ছিলাম। এবার একটু দেরীতে ডিম দিচ্ছে। রোববার সকালে পাহাড়ি ঢলের পর থেকে মা মাছ কিছু কিছু জায়গায় ডিম ছেড়েছে। আমরা সেসব সংগ্রহ করে কুপে দিচ্ছি। আমাদের ধারণা আজ রাতে পুরোদমে ডিম ছেড়ে দিবে।’
জেলেরা রোববার রাতে মা মাছের ডিম ছাড়ার আশার কথা বললেও হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, পাহাড়ি ঢলের পর ডিম ছাড়ার পরিবেশ তৈরি হলেও পানির তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গেছে। তাই ডিম পেতে আরো দুয়েকদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। ২১ তারিখের মধ্যে পুরোদমে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি জানান, ডিম ছাড়ার পরিবেশ তৈরির জন্য পাহাড়ি ঢলের প্রয়োজন, কারণ ঢলের পানি নদীতে আসলে নদীর পানি ঘোলা হয়। আমরা এটাকে ইলেক্ট্রো কন্ডাক্টিভিটি বলি।
হালদা নদী দেশে স্বাদু পানির কার্পজাতীয় মাছের প্রধান প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে হালদা নদী চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রবাহিত হয়ে মিশেছে কর্ণফুলী নদীতে। জালুবায়ু পরিবর্তন সহ নানা কারণে মা মাছের ডিম দেওয়া কমেছে বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার এই নদীতে। ২০২০ সালে হালদা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হলেও পরের দুই বছর তা কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে যায়। ২০২১ সালে হালদা থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয় সাড়ে আট হাজার কেজি, গেলো বছরে তা কমে হয় সাড়ে সাত হাজার কেজি৷
আজকের সারাদেশ/১৮জুন/এএইচ