আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
বাবা নিয়ে প্রখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমদের একটা লেখা বেশ জনপ্রিয়। সেটি হলো ‘পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একটাও নেই।’ বাবা দিবসে অনেকেই এই লেখা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করে বাবার প্রতি তাদের ভালোবাসার কথা জানান।
তবে আজ বাবা দিবসে এক শিক্ষকের লেখা নতুন করে ভাবাল নেটিজনদের। চট্টগ্রামের ক্যানটেনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মুনছুর নবীর এই লেখাটি সেই বাবাদের নিয়ে, যারা অবৈধ পথে আয় করে সন্তানদের বিলাসী-জীবন উপহার দেন। রোববার বিকেলে নিজের ফেসবুকে মুনছুর এ নিয়ে নাতিদীর্ঘ একটি লেখা দেন। দ্রুতই সেটি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। এ পর্যন্ত শুধু তার পোস্ট থেকেই লেখাটি শেয়ার করেছেন ৩২০০ মানুষ। আজকের সারাদেশের পাঠকদের জন্য তাঁর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
মুনছুর তাঁর লেখা শুরু করেন’ Hello! সোনা পুত্ররা!’ দিয়ে। এরপর তিনি লেখেন, ‘তোমাদের বাবারা তোমাদের জন্য ফ্ল্যাট, প্লট, কানাডায় বেগমপাড়া তৈরির জন্য আমাদের যে রক্ত শুষে নিচ্ছে সেটা কর হিসেবে দিতে দিতে আমরা আমাদের সন্তানের দিকে তাকাতে পারি না।
চাকরি বা রাজনীতি থেকে অবসর নিবে তোমাদের বাবারা, হজ্ব করতে যাবে, তোমাদের নিয়ে ট্যুরে যাবে, সেই ছবি তোমরা ফেসবুকে দিবে, দিয়ে ক্যাপশনে লিখবে, ‘পরের জন্মেও তোমাকে চাই বাবা!’ তারপর তোমাদের বাবারা স্থানীয় আবাসিক এলাকার হর্তাকর্তা হবে, মসজিদের সভাপতি সাজবে, তরুণদের সৎ হওয়ার নসিহত দেবে! তোমরা ‘মাই প্রাউড বেস্ট বাবা’ বলে ছবি আপলোড করবে!
আমাদের রক্ত চোষা টাকায় তোমরা বিদেশে পড়তে যাবে, তোমাদের বাবারা বিমানবন্দরে তোমাদের সি অফ করতে যাবে! তোমরা আবেগী পোস্ট দিবা! কঠিন ক্যাপশনে থাকবে কান্নার ইমোজি! আহা! কতলোকে বোক্সদ লাভ রিএক্টের সাথে হৃদয়বিদারক কমেন্ট করবে!
তোমাদের বাবারা তোমাদের দেখতে যাবে বিদেশে! দেশ থেকে এটা সেটা নিয়ে যাবে! তোমরা আবেগে নাকে ও পাছায় একসাথে বাতাস ছেড়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠবে! স্টোরিতে বাবাকে নিয়ে লেখা মিউজিকের সাথে ছবি দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করবে!
আর অন্যদিকে আমাদের সন্তানের মুখের দিকে তাকাতে পারবো না আমরা।
অথবা তুমি যখন চরম গরমে বা বারিষায় ‘দেশের পোন মারা তোমার বাবার’ পয়সায় এসি গাড়ি থেকে নেমে কলেজে যাবে তখন এসব ‘হারামজাদাদের রক্তচোষাদের’ রক্তের যোগান দিবে আমার কন্যাটি, সে কাঁদামাটি জল বা গরমে ধুলোয় পরিপূর্ণ রাস্তায় হেটে হেটে কলেজে ঢুকবে, মনে মনে নিজের বাবাকে আবিষ্কার করবে এক ব্যর্থ বাবা হিসেবে!
তোমাদের বাবাদের জন্যই আমাকে আমার মায়ের পানের খরচ কমাতে হয়েছে, আমার স্ত্রীর জন্য ফুল কেনা বন্ধ করতে হয়েছে, আমার মেয়ের জন্য প্রতিদিনের চকলেট কেনা বন্ধ করতে হয়েছে। প্রতিদিন যখন ঘরে ঢুকি আমার ছোট্ট কন্যা জিজ্ঞেস করে, বাবা আমার জন্য কি আনছো!?
প্রতিদিন মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে বলি, মা দোকান বন্ধ হয়ে গেছে যে! এজন্য আনতে পারিনি।
এইসব ঘটছে তোমাদের মহৎ বাবাদের জন্য।
তোমাদের বাবারা এত ভালো হলে দেশের এই অবস্থা কেনো রে শুয়োরের বাচ্চারা!?
কোনোদিন জিজ্ঞেস করেছিস, ‘বাবা এত এত কিছু যে আমাদের জন্য করছো, তোমার বেতন কত? এত টাকা তুমি কোথায় পাও!?’
আজকের সারাদেশ / ১৮ জুন ২৩ /একে