রাত ২:৩৬, মঙ্গলবার, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুদি দোকানের ঝাড়ুদার থেকে পৃথিবীর সেরা ধনীদের তালিকায়

হাবীব আরাফাত, ডেস্ক

পুরো পৃথিবীতে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা কত জানেন?  মাত্র ২ হাজার ৬৪০ জন। আর ১ বিলিয়ন মানে কত জানেন তো?  বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ হাজার ৮৪৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকার সমান। যদি বলি একসময়কার কোনো এক ঝাড়ুদার এই অল্প সংখ্যক বিলিয়নিয়ারের তালিকায় প্রথম দেড়শ জনের মধ্যে অবস্থান করছে, আপনি বিশ্বাস করতে চাইবেন না হয়তো। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই কিন্তু সত্যি।

একসময়কার সেই ঝাড়ুদারের নাম জান কৌম। ১৯৭৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের কিয়েভ শহরে জন্ম তার। বাবা একটি কনস্ট্রকশন কোম্পানির অল্প বেতনের চাকুরে, আর মা ছিলেন গৃহিণী। পরিবারে আর্থিক টানাপোড়ন লেগে থাকলেও কোনোভাবে চলে যেত সময়। কিন্ত ১৯ শতকের শেষ দশকে ইউক্রেনে রাজিনৈতিক সংঘাত শুরু হলে আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে কৌমের পরিবার। প্রথম দফায় ২৯৯২ সালে মা ও দাদির সাথে কৌমও পাড়ি জমান আমেরিকায়। পরবর্তীতে বাবারও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৯৯৭ সালে কিয়েভে অসুস্থ হয়ে মারা যান বাবা।

৯২ সালে আমেরিকায় যাওয়ার পর নিদারুন অর্থ কষ্টে পড়ে কৌমের পরিবার। শুরুতে তার মা একটি চাইল্ডকেয়ার ফার্মে কাজ নেন। এতে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালানো যাচ্চিলো না কোনোভাবেই। এতে বাধ্য হয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে একটা মুদি দোকানে ঝাড়ুদারের দোকানে চাকরী নেন তিনি।  বাবার  মৃত্যুর পর আরো দুর্দশা নেমে আসে তাদের পরিবারে।

ছাত্র হিসেবে খুব একটা ভালো ছিলেন না কৌম। স্কুলের গৎবাঁধা পড়াশোনা আর বই দুটোতেই চরম বিরক্তি ছিল তার। তবে সিলেবাসের বাইরের বইয়ের প্রতি বিশেষ টান ছিল। আমেরিকায় পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে কম দামে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বই কিনে পড়তেন। পড়া শেষে সেই বই অকেজো রেখে দেওয়ার লোক তিনি নন, সেসব বই ওই একই দোকানে বিক্রি করে পাওয়া অর্থ দিয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্য বই কিনতেন। এভাবেই তথ্য প্রযুক্তির প্রতি ঝুঁকে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে নিজেকে স্বশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার ভাবতে শুরু করেন কৌম। তবে সত্যি বলতে পুরোনো বই পড়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সবগুলো বিষয় মোটামুটি নখদর্পনে চলে আসে তার। একজন সনদধারী ইঞ্জিনিয়ারের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলেন তিনি না ওই সময়।

এরমধ্যে ঢিলেঢালাভাবে চলতে থাকে পড়াশোনা। ১৮ বছর বয়সে স্কুলের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন সানজ্যুসে স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ যোগাতে  ‘গ্লোবাল একাউন্টস আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়ং’- এ নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক হিসেবে চাকরি নেন। এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সময় তখনকার নতুন সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহুতে নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ শুরু করেন। সেখানে কাজ করার সময় পরিচয় হয় ব্রেইন অ্যাক্টনের সঙ্গে। অ্যাক্টন ছিলেন ইয়াহুর শুরুর দিকের একজন কর্মকর্তা। দুজনের চিন্তাভাবনা কাছাকাছি  হওয়ায় ভালো বন্ধুত্বও হয়ে যায়। দুই বন্ধুর তথ্য প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহের কথা ইয়াহুকে জানালেও ইয়াহু তাদের আগ্রহ অনুযায়ী কাজ দিতে রাজি হয়নি। এতে ২০০৭ সালে ইয়াহু থেকে বের হয়ে যান তারা।

এসময় সিদ্ধান্ত নেন ঘুরেঘুরে পৃথিবীটা দেখবেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সঞ্চিত সব অর্থ শেষ হয়ে যায়। ইয়াহুতে কাজের অভিজ্ঞতা ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দক্ষতার জোরে ফেসবুকে কাজের চেষ্টা করেন। কিন্তু ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দেয় তাদের। এতে দুজন যেমন হতাশ হন, তেমনি জেদও কাজ করে নিজেদের ভেতর। ২০০৯ সালে আইফোনের এপ্লিকেশন স্টোর দেখে নিজেরাই একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরির কথা ভাবেন।

পরিকল্পনা শেয়ার করলেন বন্ধু ব্রেইন অ্যাক্টনের সঙ্গে। অ্যাক্টন  তার এক বন্ধুর মাধ্যমে কৌমকে এক প্রোগ্রামারের কাছে নিয়ে যান। তিনি কৌমকে একটা অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) তৈরি করে দেন কৌমকে। কৌম এই অ্যাপটি তার অন্যান্য বন্ধুদের দেখালে তারা এটা নিয়ে রীতিমত ঠাট্টা-মশকরা শুরু করেন। হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। কৌমের মত এমন সৃজনশীল বন্ধুকে হতাশ দেখে এগিয়ে আসেন অ্যাক্টন। অল্পতে হতাশ না হয়ে অ্যাপটির পেছনে কৌমকে আরো সময় দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

শুরুর দিকে ওই অ্যাপ দিয়ে ম্যাসেজ দেওয়া যেত। পরে সেখানে যুক্ত করেন তৎক্ষণিক রিপ্লায়ের  সুযোগ। ২০০৯ সালের অক্টোবরে ইয়াহু থেকে আরো পাঁচজন যুক্ত হন কৌমের সঙ্গে। নতুন ওই এপ্লিকেশনটি আরো উন্নত করার জন্য তারা কৌমকে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার অনুদান দেন। এই অর্থ দারুণ কাজে লাগে তার। অল্প সময়েই মোবাইল ও কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী করে অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজসহ তিনটি অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অ্যাপটির পৃথক ভার্ষণ তৈরি করেন। খুব দ্রুত জনপ্রিয় হতে থাকে অ্যাপ্লিকেশনটি। ২০১১ সালের মধ্যে এর ব্যবহারকারি ২০ কোটি ছড়িয়ে যায়। হ্যাঁ, সেই অ্যাপ্লিকেশটিই আজকের হোয়াটসঅ্যাপ।

ফেসবুক একদিন ফেলনা ভেবে চাকরী দেয়নি কৌমকে। কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই কৌমের তৈরি হোয়াটসঅ্যাপই হুমকি হয়ে দাড়ায় ফেসবুকের জন্য। ২০১৪ সালে বিলিয়ন ডলারে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নিতে বাধ্য হয় ফেসবুক। শুধু তাই নয়, মার্ক জাকাবার্গ সময়ের বিবর্তনে কৌমকে ডেকে নিয়ে বসান ফেসবুকের পরিচালকের আসনে।

আর বর্তমানে সেই ঝাড়ুদার জান কৌমের সম্পদের পরিমাণ কত জানেন? ডলারে অংকে ১৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬২১ কোটি ৮০ লাখ টাকার সমান। আর এই পরিমাণ অর্থ নিয়ে পৃথিবীর সেরা ধনীদের তালিকায় ১৩০ শে অবস্থান করছেন কৌম।

তথ্য সূত্র: ফোর্বস

আজকের সারাদেশ/২৪জুন/এএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

কবিতা: স্বাধীনতা।

ভূমি, কার্গো দখল ও ঘর ভাংচুরের ঘটনায় কবিরহাট থানায় মামলা

চবিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ‘মুক্ত সংলাপ’ প্রত্যাখান শিক্ষার্থীদের, ষড়যন্ত্র না করতে দিল হুঁশিয়ারি

১৫ বছর পর মাতৃভূমিতে যুবদল নেতা হাসান নূরী

চবি উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক শামীম অথবা ড. আতিয়ারকে চান শিক্ষার্থীরা

ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার দায় নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন পলক

কোপা আমেরিকার সেরা একাদশে ৫ জনই আর্জেন্টিনার, ব্রাজিলের এক

গুলিবিদ্ধ কিশোরকে রিকশায় তুলতে গিয়ে দেখলেন নিজেরই সন্তান

নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করবে চবি কর্তৃপক্ষ

১২ দিন পর স্বল্প পরিসরে ট্রেন সার্ভিস চালু