আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
‘আমাকে সব সময় ঠকিয়ে এসেছ তুমি, যা আমি বুঝেও তোমাকে বুঝতে দিই নাই। তুমি আমার সত্যি ভালোবাসাটা নষ্ট করে দিয়েছ। বেঁচে থাকলে হয়তো কখনো বা কখনো তোমার মুখটা আমার দেখতে হতো, তাই আমি আর বাঁচতে চাই না। তুমি সব সময় ভালো থেকো’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে প্রেমিকার দেওয়া ওড়না গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে এক প্রেমিক ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদরের বারঘরিয়া নতুন বাজার এলাকার মহানন্দা আধুনিক ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ব্যক্তি নাটোরের বড়াই গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে ফাহিম ফয়সাল (২০)।
তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন।
নিহতের স্বজন ও তার সহপাঠীরা জানান, রোববার রাত প্রায় ১টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর তার মা বিষয়টি লক্ষ্য করেন। পরে মেস মালিককে জানান। পরে মেস মালিক তার সহপাঠীদের জানালে, তারা দরজায় নক করেন। এ সময় কোনো সাড়া না পাওয়ায় দরজা ভেঙে দেখেন ফাহিম গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।
ফাহিমের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস : ‘যে আমি মৃত্যুকে ভীষণ ভয় পেতাম, সেই আমি আজ আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। মন থেকে সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ছিলাম। কিন্তু কালকে রাতের পর থেকে আমি আর এসব মেনে নিতে পারছি না। আমাকে এত বড় মিথ্যা না বললেও পারতে। মিত্তিকা, তুমি আমার বিশ্বাসটা একদম শেষ করে দিয়েছ। আর বিশ্বাস ছাড়া বেঁচে থাকাটা সম্ভব না। তোমার মনে আছে, তুমি আমাকে তোমার ব্যবহার করা একটা ওড়না দিয়েছিলে, আমি সে ওড়নাতেই আজ ফাঁসি নিচ্ছি। আমাকে সব সময় ঠকিয়ে এসেছ তুমি, যা আমি বুঝেও তোমাকে বুঝতে দিই নাই। তুমি আমার সত্যি ভালোবাসাটা নষ্ট করে দিয়েছ। বেঁচে থাকলে হয়তো কখনো বা কখনো তোমার মুখটা আমার দেখতে হতো, তাই আমি আর বাঁচতে চাই না। তুমি সব সময় ভালো থেকো। পরিবারের প্রতি আমার অনেক দায়িত্ব ছিল, তাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। আমি ব্যর্থ সেই স্বপ্নগুলো পূরণ করতে। আম্মু, পারলে আমাকে মাফ করে দিও। তোমার ছেলেটা এভাবে চলে যেতে চায়নি কখনো। ইচ্ছে ছিল, বড় কিছু হয়ে তোমার ইচ্ছা পূরণ করার। তোমাদের অনেক সম্মান নষ্ট করেছি। আমার জন্য আর কারও কাছ থেকে তোমাদের খারাপ কথা শুনতে হবে না। আম্মু, সত্যি তোমার ছেলে এতটাও খারাপ ছিল না। সময়মতো ওষুধগুলো খেও। আমি জানি এটা মহাপাপ তাও আমি এটা করতে বাধ্য হচ্ছি। কেউ আমার কোনো ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকলে মাফ করে দিও। বিশ্বাস ভাঙলে বেঁচে থাকাটা আর সম্ভব হয়ে উঠে না। চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বিদায় নিচ্ছি। ’
ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, রোববার রাতে খবর পেয়ে মহানন্দা আধুনিক ছাত্রাবাস থেকে ফাহিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তদের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ফাহিম প্রেমিকার কাছে প্রতারিত হয়ে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আজকের সারাদেশ/১৮জুলাই/একে