আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
গেল রোববার বিকেলে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকা থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা যোগে হালিশহরের বাসায় যান ওই এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। এসময় সঙ্গে থাকা কালো রঙের একটি ব্যাগ ভুল বশত অটোরিকশায় রেখে নেমে যান তিনি। সেই ব্যাগে ছিল ৪৫ হাজার টাকা, স্ত্রীর চিকিৎসাপত্র ও নিজের পাসপোর্ট।
এলাকার একটি মসজিদে অল্প বেতনে ইমামতি করেন নজরুল। দুই সন্তানের জনক নজরুল, স্ত্রী তৃতীয়বারের মত সন্তানসম্ভবা হলে সন্তান প্রসবকালীন হাসপাতাল খরচ হিসেবে মাসিক আয় থেকে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে থাকেন। স্ত্রীর সন্তন প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসায় রোববার দুপুরে সঞ্চিত মোট ৪৫ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে ওত্তোলন করেছিলেন। সেই টাকাই ব্যাগসহ ভুলবশত সিএনজি অটোরিকশায় রেখে দিয়েছিলেন তিনি।
বাসায় প্রবেশের কিছুক্ষণ পর বিষয়টি বুঝতে পেরে আশেপাশে খোঁজলে আর পাননি সেই অটোরিকশাটি। এতে দীর্ঘদিনের সঞ্চিত স্ত্রীর সন্তান জন্মদান কালীন খরচের একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।
কোনো উপায় না পেয়ে স্থানীয় হালিশহর থানা পুলিশের ধারস্ত হন নজরুল। বিষয়টি জানতে পেরে টাকাগুলো উদ্ধারে কাজ শুরু করে পুলিশ। শুরুতে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও সেসব পর্যালোচনা করে সিএনজি অটোরিকশাটির নম্বর সংগ্রহ করে তারা। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপসের মাধ্যমে অটোরিকশাটির মালিক ও চালক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ।
‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপসের তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমে অটোরিকশাটির মালিক ও চালকের তথ্য সংগ্রহের পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু বিধিবাম, গাড়ির মালিক জানায় গাড়িটি বছর কয়েক আগে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। এরপর গাড়ির ক্রেতাকে খু্ঁজে বের করে পুলিশ। কিন্তু তাতেও মেলেনি সমাধান। অটোরিকশাটির ক্রেতা জানায় তিনিও অন্য একজনের কাছে গাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন কিছুদিন আগে।
এই অভিযানে অংশগ্রহণকারী হালিশহর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুফল কুমার দাশ বলেন, ‘আমরা ডাটাবেজে পাওয়া তথ্যানুযায়ী চালক ও মালিককের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুনি তারা গাড়িটি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নতুন মালিককে খুঁজে বের করি। তখন ওই মালিক জানায় তারাও অন্যত্র গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন কিছুদিন আগে।’
উপপরিদর্শক সুফল জানান, কোনো উপায় না পেয়ে একে খান মোড়, অলংকার মোড় ও নিউ মার্কেট মোড়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ওই অটোরিকশাটি খোঁজতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরীর বাকলিয়া থানার মিয়া গলি এলাকায় অটোরিকশাটি পাওয়া যায়।
হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কায়সার হামিদ বলেন, ‘অটোরিকশাটি পাওয়ার পর চালকেটলর কাছ থেকে ব্যাগটা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে আমরা ওই ভদ্রলোকের হাতে টাকাসহ ওনার সবকিছু তুলে দিয়েছি। তার ভষ্যানুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ব্যাংকে টাকাগুলো জমিয়েছিলেন তিনি।’
ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম জানান, পুলিশের এমন তড়িৎ প্রদক্ষেপে বাহিনীটির প্রতি তার ধারণাই বদলে গেছে। তিনি বলেন, ‘তারা গুরুত্ব দিয়ে আমার মত অসহায় মানুষের উপকারটা করেছে। আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা, টাকাটা এখন খুব জরুরি ছিল বলেই ব্যাংক থেকে তুলেছি। আমার আর ঢ়াওয়ার পথ ছিল না। পুলিশ ভাইদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা আমার।’
অসহায় ওই ইমামের হারানো টাকা, পাসপোর্ট ও চিকিৎসাপত্র উদ্ধারের পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পশ্চিম বিভাগের উপকমিশনার মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের কাজগুলো করার জন্যই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় আমাদের। আমাদের কমিশনার মহোদয়ও সাধারণ মানুষের এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করতে বলছেন। সেই লক্ষ্যেই আমরা সবসময় সেবা প্রার্থীদের সব সমস্যা এভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখি।’
আজকের সারাদেশ/১২সেপ্টেম্বর/এএইচ