আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
অসুস্থ মেয়ে অর্পিতা দাশের অস্ত্রোপচারের জন্য বহু কষ্টে ৫০ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন মা সুগন্ধা দাশ। যত্ন করে সেই টাকাটা রেখেছিলেন আলমারির ড্রয়ারে। কিন্তু একদিন আগে আগুনে অন্য সবকিছুর সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে যায়া সেই টাকাও। এতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়ের অস্ত্রোপচার কীভাবে করবেন, সেই চিন্তায় পোড়া ঘরের সামনে কেঁদেই চলেছিলেন চল্লিশোর্ধ এই স্বামীহারা নারী। মায়ের সেই দুঃখের গল্প তুলে ধরেছিল গণমাধ্যম।
সেই প্রতিবেদনটি ছড়িয়ে পড়তেই নানা দিক থেকে অর্পিতাকে সহযোগিতা করতে অনেকেই এগিয়ে আসতে চান। তবে অর্পিতার আপাতত আর সহযোগিতা লাগছে না। কেননা, পুড়ে যাওয়া ৫০হাজার টাকা অর্পিতার মায়ের হাতে তুলে দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। পাশাপাশি তিনি অর্পিতার চিকিৎসার বিষয়েও উদ্যোগ নেবেন বলে তাঁর মাকে আশ্বস্ত করেছেন।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বন্দর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়ের অস্ত্রোপচারের জন্য অনেক কষ্টে ৫০ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন মা সুগন্ধা দাশ। কিন্তু আগুনে সেই টাকাটা পুড়ে যায়। আমরা গণমাধ্যমে খবর দেখার পর এই মাকে মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছি। পাশাপাশি আমি বন্দর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলব, যাতে কম খরচে কীভাবে অর্পিতার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়।’
মঙ্গলবার দুপুরে ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের টেক পাড়া ও এয়াকুব নগরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক। এসময় তিনি অর্পিতার মাসহ ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের মাঝে মানবিক সহায়তা তুলে দেন।
২০১৭ সালে স্বামী পরিমল দাশকে হারান সুগন্ধা। এরপর থেকে ছেলে ও মেয়ের কথা ভেবে আর বিয়েমুখী হননি এই নারী। বড় ছেলের বয়স মাত্রই ২০। তিনি অবশ্য এখনো তেমন কিছু করেন না। আর ১৬ বছরের মেয়ে অর্পিতা নবম শ্রেণিতে পড়ছে পাথরঘাটা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। বন্দর হাসপাতালে দৈনন্দিন ভিত্তিতে কাজ করা মায়ের আয়েই চলছিল অর্পিতাদের সংসার। এর মধ্যে অর্পিতা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আরও বিপাকে পড়েছিলেন মা। তবে জেলা প্রশাসকের সহায়তা পাওয়ার পর আপাতত তার সেই দুশ্চিন্তা কমে গেছে।
জেলা প্রশাসক অর্থ সহায়তা তুলে দেওয়ার সময় তাই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি সুগন্ধা দাশ। তিনি এ সময় কেঁদে ফেলেন। সুগন্ধা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘অনেক কষ্টে মেয়ের অস্ত্রোপচারের জন্য টাকাটা জমিয়েছিলাম। কিন্তু আগুন আমার সবকিছুই ছাই করে দিয়েছে। এখন আমাকে ডিসি মহোদয় পুড়ে যাওয়া ৫০ হাজার টাকা সহায়তা করেছেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ও ডিসি মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আর যেসব সাংবাদিক ভাইয়েরা আমার দুর্দশার বিষয়টি তুলে ধরে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তাঁদের ঋণও শোধ করতে পারব না।’