আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
সন্তান প্রসবের সময় প্রায় সব প্রাণিই সবচেয়ে বেশি শক্তি ব্যয় করে। মানুষ সন্তান প্রসবের সময় সর্বাধিক শক্তি ব্যয় করা প্রাণিদের মধ্যে অন্যতম। একদল জীববিজ্ঞানী ৮১টি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী থেকে তথ্য সংগ্রহ করে শক্তি পরিমাপের একক জুল-এ শক্তির ব্যয় হিসেব করে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছেন।
সায়েন্স– জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটির ফলাফল বলছে, মানুষের প্রজননের সময় মোট ২ লাখ ৮ হাজার ৩০৩ কিলোজুল শক্তি ব্যয় করে। গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনার মধ্যে মানুষ প্রজননের সময় সব থেকে বেশি শক্তি ব্যয় করা চারটি প্রাণির মধ্যে একটি। গর্ভাবস্থায় বিপাকীয় শক্তি ব্যয় করার দিক থেকে মানুষ দ্বিতীয়।
গবেষণা চালানো ৮১টি প্রজাতির প্রাণির মধ্যে সাদা-লেজযুক্ত হরিণ বা ভার্জিনিয়া হরিণ (ওডোকোইলিয়াস ভার্জিনিয়াস) প্রাণীটি (বিশেষত স্ত্রী) প্রজননের সময় সর্বাধিক শক্তি ব্যয় করে। এটি গড়ে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৩৭ কিলজুল [এক কিলোজুল হলো ১ হাজার জুলের সমান] শক্তি ব্যয় করে। উল্টোদিকে রোটিফার (ব্র্যাকিওনাস প্লাসিটিলিস) প্রজাতির প্রাণি যেটিকে মাছের লার্ভাকে খাওয়ানো হয়, সেটি প্রজননের সময় সব থেকে কম শক্তি ব্যয় করে। এটি প্রজননের সময় মাত্র ০.০০০০০৩ কিলোজুল শক্তি ব্যয় করে।
জীববিজ্ঞানীরা প্রজাতিভেদে প্রাণিগুলোর সন্তান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভিন্নতাও পেয়েছেন। প্রত্যেকটি প্রাণি প্রজননের সময় কি পরিমাণ বিপাকীয় শক্তি ব্যয় করে সেটি পরিমাপ করে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রজননের জন্য আগে যে পরিমাণ শক্তি ব্যয় হয় বলে ভাবা হত তার থেকেও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি শক্তি ব্যয় হয়। এমনকি কোন ক্ষেত্রে ১০ গুণ বেশি শক্তি ব্যয় হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণিরা ওভিপারাস ইক্টোথার্মের [ডিম পাড়ে এমন প্রজাতি] বেশিরভাগ প্রজাতি যেমন মাছ, সরীসৃপ ও উভচর প্রাণির থেকে তিনগুণ বেশি শক্তি ব্যয় করে। আবার সাপ ও টিকটিকির মতো ভিভিপারাস ইক্টোথার্মের [যাদের ভ্রূণ সম্পূর্ণরূপে গর্ভে বিকশিত হয়] তুলনায় প্রজননের সময় দ্বিগুণ শক্তি ব্যয় করে।
বড় প্ল্যাসেন্টাল স্তন্যপায়ী [এসব স্তন্যপায়ী প্রাণী গর্ভাবস্থায় ভ্রূণকে খাদ্য গ্রহণ করাতে পারে] প্রাণিরা প্রজননের সময় গর্ভাবস্থায় কয়েক মাস ধরে এক বা একাধিক সন্তানের বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি প্রসব পরবর্তী দীর্ঘ সময় সন্তানের যত্ন নেয়। অন্যদিকে এক্টোথার্ম [শীতল রক্তের প্রাণী, সাধারণত সরীসৃপ] প্রজাতির প্রাণিগুলো প্রজননের জন্য ডিম পাড়ে। কিন্তু সন্তান উৎপাদন করতে এবং লালন করতে সকল প্রজাতির প্রাণিকে দ্বিগুণ শক্তি ব্যয় করতে হয়।
যদিও গবেষণাটি বিভিন্ন প্রাণীর প্রজননের সময় প্রকৃত শারীরিক শক্তি ব্যয় পরিমাপের প্রথম প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে একটি, এটি শুধু জন্ম বা ডিম পাড়ার মুহূর্ত পর্যন্ত শারীরিক শক্তির খরচ বিবেচনা করে। এটি শক্তি খরচের নিবিড় প্রক্রিয়া ও সে সময় প্রাণী কেমন আচরণ করে তা নিয়ে কোন কিছু উল্লেখ করেনি। ফলে বুকের দুধ তৈরি করা বা সন্তানের জন্য দীর্ঘায়িত যত্ন প্রদান করা, যেটি বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণির সাধারণ বৈশিষ্ট্য সেগুলো গবেষণায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টরিয়ায় অবস্থিত মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিজ্ঞানী এবং গবেষণার প্রধান লেখক স্যাম গিন্থার ব্যাখ্যা করেছেন, “আমরা সন্তান প্রসব করার পর যত্ন নিতে কেমন শক্তি খরচ হয় তা গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করিনি কারণ এটি পরিমাপ করার অনেক উপায় রয়েছে। যেমন প্রাণীর কার্যকলাপের ধরণ, তরুণদের বিপদ থেকে রক্ষা করা, উষ্ণতার জন্য আলিঙ্গন করা, ইত্যাদি।”
সূত্র: এল পেইস
আজকের সারাদেশ/জেএম