আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন
হজ ও হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবাহী ঘটনা পরস্পর সম্পৃক্ত। পবিত্র কুরআনে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর নাম ২৫টি সুরায় ৬৯ বার উল্লেখ রয়েছে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার পুত্র ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন। পবিত্র কুরআনের ভাষায় ‘স্মরণ করো, যখন ইব্রাহিম ও ইসমাইল কাবার ভিতগুলো ওঠাচ্ছিল…’ (সুরা বাকারা, আয়াত :১২৭)।
হজরত ইব্রাহিম (আ.) মানবজাতির জন্য বায়তুল্লাহে পবিত্র হজের প্রচলন করেন। ইব্রাহিম (আ.)-কে আবুল আম্বিয়া বা নবিদের পিতা বলা হয়। তিনিই মুসলিম মিল্লাতের প্রতিষ্ঠাতা—‘… (এটি) তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের মিল্লাত। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম’ (সুরা হজ, আয়াত : ৭৮)।
পবিত্র হজ, ওমরা পালিত হয় মক্কার মসজিদুল হারামকে কেন্দ্র করে। পৃথিবীর মধ্যস্থলে পবিত্র কাবাশরিফের অবস্থান এবং পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সুপ্রাচীন ঘর। পবিত্র কুরআনের ভাষায় ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটিই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কা নগরীতে অবস্থিত’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত :৯৬)।
পবিত্র কুরআনের ছয় নম্বর সুরা, সুরা আনআমের ৯২ নম্বর আয়াতে পবিত্র মক্কা নগরীকে ‘উম্মুল কুরা’ বা আদি জনপদ বলা হয়েছে। মক্কা নগরীর বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে : ১. মক্কা (সুরা ফাতহ্ ২৪) ২. বাক্কা (সুরা আল ইমরান ৯৬) ৩. উম্মুল কুরা (সুরা আনআম ৯২, সুরা ০৭) ও বালাদুল আমিন (সুরা ত্বিন ০৩)। পবিত্র কাবাকে কেন্দ্র করেই মানবসভ্যতার বিস্তৃতি ঘটে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনুভব : ‘দূর আরবের স্বপন দেখি বাংলাদেশের কুটির হতে/ বেহুঁশ হয়ে চলেছি যেন কেঁদে কেঁদে কাবার পথে…’।
প্রতিদিন কাবাঘরের ওপর মহান আল্লাহর ১২০টি বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়— ৬০টি তাওয়াফকারীর ওপর, ৪০টি নফল নামাজ আদায়কারীর ওপর এবং ২০টি যে কাবাঘরের দিকে তাকিয়ে থাকে, তার ওপর।
হজ ও ইব্রাহিম নামে দুটি সুরা রয়েছে এবং হৃদয়গ্রাহী আলোচনা পাওয়া যায় পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সুরায়। বার্ধক্যে উপনীত হয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) দুনিয়ায় তার বংশধর রেখে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মহান আল্লাহর দরবারে আকুতি জানালেন, ‘রাব্বি হাবলি মিনাস সালিহিন’, অর্থাত্ ‘হে আমার প্রতিপালক! সত্কর্মশীলদের মধ্য থেকে আমাকে (পুত্র সন্তান) দান করুন’ (সুরা সাফফাত, আয়াত :১০০)।
পবিত্র হজ ও ইব্রাহিম (আ.) প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন আমি ইব্রাহিমকে সে ঘরের (বায়তুল্লাহ) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না… মানুষের কাছে হজের ঘোষণা দাও; তারা আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূরপথ পাড়ি দিয়ে… এবং প্রাচীন ঘরের (বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ করে’ (সুরা হজ, আয়াত :২৬- ২৯)।
হজরত ইব্রাহিম (আ.) মুসলিম জাতির সুখ লাভ, দুঃখ লাঘবে, খাদ্যবস্ত্র, বাসস্থানের নিরাপত্তা, সন্তানসন্ততি ইত্যাদির জন্য অসংখ্যবার দোয়া করেছিলেন। দোয়াগুলোর উল্লেখ রয়েছে বিভিন্ন সুরায়, যেমন— রিজিক, আবাসন : রাব্বিজ জাআল হাজাল বালাদান আমিনাও ওয়ারযুক্ব্ আহলাহু মিনাছামারাত… অর্থাত্ ‘হে আমার প্রতিপালক! এই শহরকে নিরাপদ শহর করিও, আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতে ইমান আনে, তাহাদেরকে ফলমূল হইতে জীবিকা প্রদান করিও…’ (সুরা বাকারা, আয়াত :১২৬)।
নামাজ প্রতিষ্ঠা, বংশধরদের কল্যাণ
রাব্বিজজ আলনি মুক্বিমাস সালাতি ওয়া মিন জুররিই্? য়্যাতি রাব্বানা ওয়া তাক্বাব্বাল দুআয়ি। রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালে দাইয়্যা ওয়ালিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসাব। অর্থাত্ ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার বংশধরদের নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী বানাও; হে আমাদের প্রতিপালক! আমার দোয়া কবুল করো। হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করো’ (সুরা ইব্রাহিম, আয়াত :৪০, ৪১)।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর