বিকাল ৫:১৬, বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সচিবকে ‘বিপদে ফেলতে’ তদন্ত কমিটির বৈঠকে এসে হাজির উপসচিব!

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন

চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান সচিব ও সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর নারায়ন চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তদন্ত কমিটি। সোমবার (৩ জুন) সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের সম্মেলনকক্ষে বোর্ডের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেকে কথা বলেন তদন্ত কমিটি দুই সদস্য। কিন্তু সেই ‘গোপনীয়’ কার্যক্রমে বোর্ডের উপসচিব মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের উপস্থিত থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, মোহাম্মদ বেলাল হোসেন তদন্ত কমিটির কেউ নন। এমন একজন কর্মকর্তা তদন্তে কার্যক্রমে উপস্থিত থাকায় একদিকে যেমন তদন্ত কর্মকর্তারা প্রভাবিত হতে পারেন, তেমনি সাক্ষাৎকার দেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বিভ্রান্ত হয়েছেন।

এই তদন্তের সূত্রটা শিক্ষাবোর্ডের সচিব নারায়ন চন্দ্র নাথের এইচএসসি পরীক্ষার ফল নিয়ে। নারায়ন চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেব নাথ গতবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তবে তিনি একটি বিষয়ে জিপিএ-৫ পাননি। সেজন্য সচিবের পরিবার পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে চায়। কিন্তু পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে গিয়ে দেখতে পান, কে বা কারা আগেই নক্ষত্র দেব নাথের ছয় বিষয়ের ১২টি পত্রের আবেদন করে ফেলেছে। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সচিবের স্ত্রী বনশ্রী নাথ পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনকারীকে শনাক্ত ও আইনি প্রতিকার চেয়ে গত ৪ ডিসেম্বর পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে এ নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীমের মোবাইল ফোন নম্বর রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে নক্ষত্র দেবনাথের নামে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনটি করা হয়েছিল। বিষয়টি উল্লেখ করে গত ১৫ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এই ঘটনায় শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব আবদুল আলীম ও চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন বোর্ডের বর্তমান সচিব নারায়ন চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী দেবনাথ। ইদ্রিসকেও আসামি করা হয়েছে কারণ তিনি অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যগুলো বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর বলে অভিযোগ করেন নারায়ন চন্দ্র নাথ। এদিকে সচিবের ছেলের ফলাফল সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। অর্থাৎ একটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলার ফৌজদারি মামলা এবং অন্যটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশক্রমে তদন্ত।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) করা তদন্ত কমিটির তিন সদস্যের দুজন সোমবার সকালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে আসেন। তাঁরা হলেন, কমিটির আহ্বায়ক মাউশির মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন এবং সদস্য মাউশির ইএমআইএস সেলের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান।

তদন্ত কমিটির দুই সদস্য সকাল থেকে বোর্ডের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বক্তব্য নেওয়া শুরু করেন। সেই কার্যক্রমে শুরু থেকে উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের উপসচিব বেলাল হোসেন। বিকেল সাড়ে তিনটার সময় শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের দপ্তরে গেলে পাশের কক্ষে বেলাল হোসেনকে তদন্ত কমিটির সদস্যদের পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। অবশ্য সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বেলাল হোসেন সেখান থেকে বেরিয়ে যান। পরে আধাঘণ্টা পর সাংবাদিকেরা শিক্ষাবোর্ড ছাড়লে তিনি পুনরায় সাক্ষাৎকার নেওয়ার কক্ষে প্রবেশ করেন।

তদন্ত কমিটি শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এ এম এম মুজিবুর রহমানের বক্তব্যও নিয়েছে। এই কর্মকর্তা উপসচিব উপস্থিত থাকায় বিব্রত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জন্য বিব্রতকর। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে তদন্ত কমিটির জানতে চাওয়া বিষয়গুলোর উত্তর দিয়েছি। সেখানে বোর্ডের আরেকজন কর্মকর্তা থাকা তো আমার জন্য বিব্রতকর। তিনি বাইরে থাকতে পারতেন। আর উনি তদন্ত কমিটির সদস্য না। তারপরও কীভাবে তিনি সেখানে থেকেছেন সেটি আমি জানি না।’

বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চ মাধ্যমিক) মোহাম্মদ দিদারুল আলমও তদন্ত কমিটির ডাকে কথা বলতে গিয়ে উপসচিব বেলাল হোসেনকে দেখে বিব্রত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ওকে দেখে তদন্ত কমিটির সদস্যদের বলেছি তিনি থাকলে কথা বলতে পারবেন না। পরে তিনি কক্ষের বাইরে চলে যান। এরপর আমি তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলি।’

বোর্ডের সচিব নারায়ন চন্দ্র নাথও তদন্ত কমিটির সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় উপসচিব বেলাল হোসেনের উপস্থিত থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেয়ারম্যান ও উপসচিব নানাভাবে চাপ দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে আগে বক্তব্য নিয়েছিলেন। গণমাধ্যমেও এই বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। সেখানে তদন্ত কমিটির সদস্যরা সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় যদি উপসচিব উপস্থিত থাকেন, তাহলে তো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সত্য কথা বলতে সাহস করবেন না। সেজন্য আমি মনে করি তদন্ত কার্যক্রমে এটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর তদন্ত কমিটির সদস্যের বাইরের কেউ সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় উপস্থিত থাকা ন্যায়বিচারের পরপন্থী বলে মনে করি।’

বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিমের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটির কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য বোর্ডের চার কর্মকর্তাকে আমি দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সেই চারজনের একজন উপসচিব বেলাল হোসেন। তিনি তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করতে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন।’

এভাবে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় থাকতে পারেন কিনা-এমন প্রশ্নের অবশ্য উত্তর দিতে চাননি চেয়ারম্যান।

বোর্ডের অন্য কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করার জন্য অফিস আদেশ দেওয়ার বিষয়টি রীতিতে পড়ে না। এক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি যদি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ডাকেন তখন ওই দপ্তরের প্রধানকে জানানো যায়। তাঁরাই ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পাঠাবেন। সেখানে চারজনকে অফিস আদেশ দিয়ে দায়িত্ব দিতে হয় না।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় উপসচিবের উপস্থিত থাকা নিয়ে জানতে কমিটির আহ্বায়ক মাউশির মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চাইলে তিনি ব্যস্ত থাকায় বলা সম্ভব হয়নি। পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। ফলে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কমিটির আরেক সদস্য মাউশির ইএমআইএস সেলের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমানকে ফোন করলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সর্বশেষ সংবাদ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো দাপুটে আওয়ামী লীগের শাহ আমানত ও জান্নাত ট্রেডিং

আ.লীগের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

পাহাড়ে সেনাশাসন নয়, অপতৎপরতা প্রতিহত করতেই সেনাবাহিনী

চবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপন

যুবদল নেতা শহিদুল ইসলাম শহিদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা

ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলেম-ওলামাদের ঢল