আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন
কলম্বিয়ার সাবেক কোচ হোর্হে পিন্টো বর্তমান কোচ নেস্তর লরেঞ্জো সম্পর্কে বলেছিলেন, এই দল পরিচালনার মতো ‘ওজন’ লরেঞ্জোর নেই। যার কখনো জাতীয় দল চালানো দূরে থাক, ক্লাবের প্রধান কোচ হিসেবে অভিজ্ঞতাও মাত্র এক মৌসুমের, সে কীভাবে কলম্বিয়ার মতো জাতীয় দল চালাবে?
আর তাই আর্জেন্টাইন কোচ নেস্তর লরেঞ্জোকে যখন কলম্বিয়া জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়, বেশ ক্ষোভই প্রকাশ করেছিলেন কেউ কেউ। অনেকে মজা করে এমনও বলেছিলেন, কলম্বিয়ার কোচ হওয়ার প্রধানতম যোগ্যতা আর্জেন্টিনার পাসপোর্ট থাকা। আর্জেন্টাইন বলেই পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকার পরও কোচের চাকরি পেয়েছেন লরেঞ্জো।
ঘটনাটা ২০২২ সালের জুনের। দুই বছর পর এসে কলম্বিয়া দলে লরেঞ্জোর কাজের ফলাফল দেখা যাচ্ছে, তাঁর অধীন টানা ২২ ম্যাচ অপরাজিত কলম্বিয়া। এরই মধ্যে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে দলটি। তাও আবার ব্রাজিলের গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে।
অর্জনটা অবশ্যই কলম্বিয়ান খেলোয়াড়দের, তবে বেশ খানিকটা অবদান লরেঞ্জোরও। অন্য অর্থে বললে আর্জেন্টাইন কোচিংয়ের। শুধু ৫৮ বছর বয়সী লরেঞ্জোই নন, এবারের কোপা আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন কোচরাই। যে চারটি দল গ্রুপ–সেরা হয়ে কোয়ার্টারে জায়গা করেছে, সব কটিরই কোচ আর্জেন্টাইন। শত বছরের বেশি বয়সী কোপা আমেরিকায় চার আর্জেন্টাইন কোচের দলের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।
এ মুহূর্তে চারজন টিকে থাকলেও এবারের কোপায় কোচ হয়ে পা রেখেছিলেন ৭ আর্জেন্টাইন। ১৬ দলের মধ্যে ৭ দলের, অর্থাৎ টুর্নামেন্টের প্রায় অর্ধেক দলই ভরসা করেছিল আর্জেন্টাইন কোচদের ওপর। তাদের মধ্যে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘এ’–তে লিওনেল স্কালোনির দল আর্জেন্টিনা, ‘বি’–তে ফার্নান্দো বাতিস্তার দল ভেনেজুয়েলা, ‘সি’–তে মার্সেলো বিয়েলসার দল উরুগুয়ে এবং ‘ডি’–তে নেস্তর লরেঞ্জোর দল কলম্বিয়া।
এছাড়া ‘ডি’ গ্রুপের দল কোস্টারিকা ও প্যারাগুয়ের কোচ ছিলেন আর্জেন্টাইন গুস্তাভো আলফারো ও ড্যানিয়েল গারনারো। তাঁদের দল শেষ আটে উঠতে পারেনি। ‘এ’ গ্রুপ থেকে বিদায় নিয়েছে আরেক আর্জেন্টাইন রিকার্ডো গারেকার দল চিলি।
টুর্নামেন্টে টিকে থাকা আর্জেন্টাইনদের দল গ্রুপসেরা হওয়ায় পরের পর্বে কারও সঙ্গে কারও দেখা হচ্ছে না। তবে চার দলই কোয়ার্টার ফাইনালে জিতলে মুখোমুখি লড়াই হবে সেমিফাইনালে। কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে চার আর্জেন্টাইন কোচ অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০১৫ আসরে সেমিফাইনালে খেলা আর্জেন্টিনা (জেরার্দো মার্তিনো), চিলি (হোর্হে সাম্পাওলি), পেরু (রিকার্ডো গারেকা) ও প্যারাগুয়ের (র্যামন দিয়াজ) কোচ ছিলেন আর্জেন্টাইন। ওই সময় কলম্বিয়ার দায়িত্বেও ছিলেন একজন আর্জেন্টাইন—হোসে পেকারম্যান। আর্জেন্টাইন কোচদের এসব সাফল্য দেশটির অন্য কোচদের জন্যও দরজা খুলে দিয়েছে।
বলা হয়ে থাকে, আর্জেন্টাইন কোচরা ট্যাকটিক্যালি ও দল ব্যবস্থাপনা—দুই দিক ভালো পারদর্শী। ফুটবলীয় সাফল্য ও দক্ষতায় আর্জেন্টিনার সঙ্গে সব সময়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে প্রতিবেশী ব্রাজিলের। পাঁচবার বিশ্বকাপ জেতা ব্রাজিল আন্তর্জাতিক ফুটবলে অনেক দুর্দান্ত খেলোয়াড় উপহার দিলেও কোচ সরবরাহের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে। বিপরীতে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সেরা কোচদের অনেকেই আর্জেন্টিনা থেকে উঠে আসা।
যে দেশের কোচ অনভিজ্ঞ হলেও সফলতা এনে দিতে পারেন, বহন করেন সফল কোচদের উত্তরাধিকার, মানিয়ে নিতে পারেন বৈচিত্র্যের সঙ্গে—এমন নানামুখী গুণের কোচের দ্বারস্থ অন্যরা হবে না কেন!