আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন আরও চারজন। এ নিয়ে আলোচিত এই মামলায় মোট ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এসময় মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারসহ চারজন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন।
চার সাক্ষী হলেন- অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও ব্যালাস্টিক এক্সপার্ট আবদুর রহিম, হত্যা মামলার ঘটনাস্থল জিইসি মোড়ের একটি ফল দোকানের কর্মচারী আবদুর রহিম, পুলিশ কনস্টেবল রনিতা বড়ুয়া ও ভুক্তভোগী মিতুর একই ভবনের বাসিন্দা উম্মে ফরহাদ আহমেদ সুরমা।
চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুর রশীদ বলেন, মিতু হত্যা মামলায় আজ (সোমবার) চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সেসময় সিআইডি চট্টগ্রামে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক (ব্যালাস্টিক এক্সপার্ট), ফলের দোকানদার, পুলিশ কনস্টেবল ও মিতুর একই ভবনের বাসিন্দা আছেন। তবে তাদের কাউকে আসামিপক্ষ জেরা করেনি। কারণ জেরা করার মত তেমন কিছু ছিল না। আগামী ১৬ অক্টোবর মামলাটির পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে সিআইডির এএসপি আবদুর রহিম বলেন, ২০১৬ সালের ৩০ জুন সিএমপি ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের কাছ থেকে পাওয়া স্মারক মূলে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটি কাগজের বাক্সের ভিতর সিলগালা অবস্থায় আলামত পাই। আলামত হিসেবে ৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম পিস্তলের দুইটি অব্যবহৃত, একটি ব্যবহৃত ও একটি মিস ফায়ার হওয়া কাতুর্জ, স্থানীয়ভাবে তৈরি একটি পয়েন্ট ৩২ ক্যালিবারের রিভলবার, স্থানীয়ভাবে তৈরি একটি রিভলবার পাওয়ার কথা আদালতে জানায়। এসব আলামতের বিষয়ে মতামত, ব্যালাস্টিক রিপোর্ট ও রাসায়নিক প্রতিবেদন পরীক্ষা শেষে জমা দেওয়া হয়েছে।
জিইসি মোড়ের ফলের দোকানের কর্মচারী আবদুর রহিম সাক্ষ্যে বলেন, ঘটনার দিন সকালে দোকান খুলতে গেলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও জড়ো হওয়া লোকজন দেখতে পাই। তারা জানায়, এখানে একজনকে সন্ত্রাসীরা মেরে চলে গেছে। সেখান থেকে পুলিশ তিনটি গুলি, একটি গুলির খোসা ও এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করে জব্দ তালিকা করে। আমাকে সাক্ষর করতে বলায় আমি সাক্ষর করি।
কনস্টেবল রনিতা বড়ুয়া সাক্ষ্যে বলেন, ঘটনার দিন সকাল ৬ টা ৪৫ মিনিটে এসআই ত্রিরতন বড়ুয়া ফোন করে বলে, জিইসি মোড়ে একটা লাশ আছে। ওখানে যেতে। আরো দুজন পুলিশ সদস্যসহ সেখানে যাই। ওখানে গিয়ে দেখি ওয়েল ফুডের সামে কালো বোরকা পরা একটি লাশ পড়ে আছে। এসআই ত্রিরতন বড়ুয়া সুরতহাল করেন। তাকে সহযোগিতা করি। তিনি জব্দ তালিকাও করেন।
মিতুর একই ভবনের বাসিন্দা উম্মে ফরহাদ আহমেদ সুরমা আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে বলেন, আমার দুই ছেলেও ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে পড়ে। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে আমার স্বামী ফোন করে আমাকে জানায়, মিতু ভাবি মারা গেছে। আমি লিফট থেকে নেমে দেখি মাহির। ও আমাকে বলে, আমার আম্মু মারা গেছে। সে তখন কান্না করছিল। তাকে ভবনের ভিতরে পাঠিয়ে আমি ওয়েল ফুডের সামনে যাই। দেখি মিতু ভাবি রাস্তায় পড়ে ছিলেন রক্তাক্ত অবস্থায়। গুলিল চিহ্ন দেখি। এরপর পুলিশ সুরতহাল করে। আমি সাক্ষর করি। আগের দিন রাতে আমাকে মিতু ভাবি ফোন করেছিলেন। উনার কাছে এসএমএস আসে ছেলেকে তাড়াতাড়ি স্কুলে নিয়ে যেতে। উনি জানতে চান, আমার কাছেও এসএমএস এসেছে কিনা। আমি বলেছি, না আসেনি। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আমরা একই বাসায় ছিলাম। সেখানে খাওয়া দাওয়া করি।
এর আগে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মামলার বাকি আসামিরা হলেন- মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা ও খায়রুল ইসলাম। ২০১৬ সালে মিতু খুন হওয়ার পর তার স্বামী, সে সময়ের পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। নানা নাটকীয়তা শেষে পিবিআইয়ের তদন্তে এখন তিনিই এ মামলার আসামি। এসপি বাবুল তার কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে ছিলেন। বদলি হওয়ার পর তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।