আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
অ্যান্টিবায়োটিক মূলত ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ থেকে সৃষ্ট রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ড্রাগ এমন এক ধরনের ওষুধ যা ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমনের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। যদি কেউ এমন রোগে আক্রান্ত হন তখন চিকিৎসকের পরামর্শে এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হয়। আর যদি কেউ অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ড্রাগ পর্যাপ্ত সময় ধরে কিংবা সঠিক নিয়মে গ্রহণ না করেন তখন ব্যাক্টেরিয়া ধংস না হয়ে উল্টো আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে
এমনটা হলে তাকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স বলা হয়। আর এটি হলে রোগীর আগে যে অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হত তখন আর সেটি কাজ করে না। তখন আরো উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হয় বা কখনো কখনো তা-ও কাজ করে না। এজন্য অসচেতনতা কিংবা অবহেলা অনেকাংশে দায়ী। এছাড়াও রয়েছে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক না চেনা। অর্থাৎ কোনটি অ্যান্টিবায়োটিক আর কোনটি নয় তা অনেক সময়ই রোগী বুঝতে পারেন না। কেন বুঝতে পারেন না তাই আমরা আজ খোজার চেষ্টা করেছি।
বাইরে থেকে খেয়ে সোমববার (২০ নভেম্বর) বাসায় ফিরলেন সুমন বড়ুয়া। ফেরার পর হঠাৎই পেট ব্যথা শুরু হয়ে যায়। তখনই তিনি তার ছেলেকে নিকটস্থ ফার্মিসি থেকে ফ্লাজিল এক পাতা আনতে বলেন। পরে তার সন্তান ফ্লাজিল নিয়ে বাসায় ফিরলে দেখা যায় ট্যাবলেট পাতার গায়ে এন্টিবায়োটিক লেখা নেই। এর আগে একই ওষুধ তার বাসায় কেনা হয়। সেখানে ওষুধটির প্যাকেটে এন্টিবায়োটিক লেখা ছিলো। কিন্ত এবার ওষুধটি খাবেন কিনা তা দ্বিধাদন্ধে পড়ে যান।
সুমন বড়ুয়া প্রতিবেদককে বলেন, কয়েক মাস আগে এই ওষুধটি কেনা হয়। সেখানে সুন্দর করে ওষুধের গায়ে এন্টিবায়োটিক লেখা ছিলো। কিন্ত এবার তা না দেখে চিন্তিত হযে পড়ি। কারণ ওষুধটি আসল না নকল তা বুঝে উঠতে পারছি না। পরে পরিচিত চিকিৎসকরে পরামর্শ নিয়ে ওষুধটি খাওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে প্রশ্ন করা হতো কোনটা এন্টিবায়োটিক ওষুধ। কিন্ত এখন তা দরকার পড়ে না। কারণ সকল ওষুধের গায়ে এখন লাল বর্ডার দিয়ে ‘এন্টিবায়োটিক’ লেখা থাকে। ওষুধ কোম্পানির সকলকে বলা হয়েছে এটা। গত ১ বছর সময় ধরে এ লেখাটি রাখা হচ্ছে। তবে এখনো কিছু ওষুধের গায়ে লেখা নাও থাকতে পারে। কারণ অনেনেকের কাছে পুরোনো ওষুধও থাকতে পারে । যেটা তারা ১২- ১৩ মাস আগে তৈরী করেছিলেন। কিন্ত আইন হওয়ার পর সকল এন্টিবায়োটিক ওষুধে ‘এন্টিবায়োটিক’ লেখা থাকে। লাল বর্ডার দিয়ে ওষুধের গায়ে ‘এন্টিবায়োটিক’ লেখা থাকলেই কেবল সেটি খেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এন্টিবায়োটিক ওষুধ ফুল কোর্স সম্পন্ন না করলে মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন, ক্রয়-বিক্রয়ে সকলকে সচেতন করতে হবে। তবে এ নিয়ে একটি সুখবর আছে তা হলো- এন্টিবায়োটিক সচেতনতা বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভুক্ত হচ্ছে। তা বাস্তবায়ন প্রায় শেষ। এখন এই বিষয়টি মন্ত্রিসভায় রয়েছে। আশা করি আগামী ২ বছরের মধ্যে তা পাঠ্যপুস্তকের আসবে। যার ফলে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিসট্যান্স এর ভয়াবহতা সর্ম্পকে ছোট থেকে জানা যাবে। ’
এন্টিবায়োটিক ওষূধ কোর্স সম্পন্ন না করলে কি হয় এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্সকে মানব সভ্যাতর ১০টি স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে অন্যতম হিসাবে ঘোষণা করেছে। বর্তমানে প্রতিবছর পুরো বিশ্বের ১২ লক্ষ ৭০ হাজার মারা যায়। এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স কেন হয়? এটা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো বিনা প্রয়োজনে এবং চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবন করা। একই সাথে সেই এন্টিবায়োটিক ফুল কোর্স সম্পন্ন না করায় এমন রেজিস্ট্যান্স হয়। যার ফলে মানব শরীরে জীবাণুটি অর্ধমৃত থাকে। পরের বার একই অসুখে ওষুধ সেবন করলে তা আর কাজ করে না। সৃষ্টি হয় জটিল রোগ। এ জন্য এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স সর্ম্পকে সকলেকে জানতে ও বুঝতে হবে।
প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি বন্ধে কী করছেন এমন প্রশ্নে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফিন বলেন, আমরা এখন প্রতি মাসে ২-৩ বার বিভিন্ন উপজেলায় এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স সর্ম্পকে সচেতন করে কর্মশালা করি। সেখানে অত্র এলাকার ওষুধ ব্যবসাী ও জন সাধারণ মাঝে সচেতনা সৃষ্টি করা হয়। আগে কোনো আইন ছিলো না। যার কারনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত না। বর্তমানে ‘ওষুধ ও প্রসাধনী আইন, ২৩’ – হয়েছে। অনিয়ম পেলেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজকের সারাদেশ/১৩ডিসেম্বর/এএইচ