আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
দুনিয়া মুমিনের জন্য পরীক্ষা ক্ষেত্র। বিপদ-মুসিবত হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি পরীক্ষা মাত্র। আল্লাহতায়ালা বিপদ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষা করেন।
এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, জানমালের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে তোমাদের মধ্যে যারা ধৈর্যশীল এবং বিপদের সময় ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’, অর্থাৎ, ‘নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদের সবাইকে তার কাছে ফিরে যেতে হবে’ বলে, তাদের প্রতি রয়েছে মহান রবের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও নেয়ামত।
আর তারাই প্রকৃতপক্ষে হেদায়েতপ্রাপ্ত’ (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭)। আরও বলেন, লোকেরা কি মনে করে যে, ‘আমরা ইমান এনেছি’-এ কথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? তাদের আগে যারা ছিল আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম। অতঃপর আল্লাহ অবশ্য জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী’ (সূরা আনকাবুত : ১-৩)।
অনেক সময় বিপদ প্রদানের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ ক্ষমা করা হয়ে থাকে। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন নারী-পুরুষের বিপদ-মুসিবত লেগেই থাকে। এ বিপদ-মুসিবত তার শারীরিক, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে হতে পারে। আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা চলতেই থাকে।
আর আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর তার ওপর গুনাহের কোনো বোঝাই থাকে না’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ১৫৬৭)। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মুসলমানদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ আসে এর দ্বারা আল্লাহ তাঁর পাপ দূর করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে ফোটে এর দ্বারাও’ (বুখারি : ৫৬৪০)। আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিমের ওপর কোনো বিপদ পতিত হলে তার বিনিময়ে তার গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়, এমনকি ক্ষুদ্রতর কোনো কাঁটা বিদ্ধ হলেও’ (মুসলিম : ৬৪৫৯)।
দুনিয়ার জীবনে এসব বিপদ থেকে পরিত্রাণের পথও বলে দেওয়া হয়েছে। কিছু আমলের মাধ্যমে বান্দা এসব বিপদ থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ বরকত লাভ করতে পারে। হাদিসে এসেছে, হজরত হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন’ (আবু দাউদ : ১৩১৯)।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর, আর তা আল্লাহভীরু ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের কাছে নিশ্চিতভাবেই কঠিন’ (সূরা বাকারা : ৪৫)। আল্লাহ মানুষকে বিপদ দেন তার পরিশুদ্ধি অর্জনের জন্য, স্বর্ণকার যেভাবে আগুনে স্বর্ণ দেন খাঁটি করার জন্য। তবে যখনই কোনো বিপদ আসবে, সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কথা স্মরণ করলে এবং নফল নামাজে দাঁড়িয়ে গেলে মিলবে বিপদ থেকে মুক্তি এবং আত্মিক প্রশান্তি। একই সঙ্গে পরকালের খাতায়ও জমা হয়ে যাবে সবর ও নামাজের সওয়াব।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-মাছের পেটে নবি ইউনুস (আ.) নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করেছিলেন এবং আল্লাহ তাকে সেই বিপদ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম ব্যক্তি বিপদে পড়ে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করে, মহান আল্লাহ তা কবুল করবেন এবং তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দেবেন (আহমাদ, তিরমিজি)। ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ্জলিমিন।’ অর্থ : (হে আল্লাহ!) আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি অপরাধী (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৭)।