আজকের সারাদেশ ডেস্ক:
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ২১৪টি আসনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে বড় পার্থক্য নিয়ে দেশটির কারাবন্দি সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন।
সময়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর প্রার্থীদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান বাড়লেও শেষ পর্যন্ত জোট সরকারই গঠন করতে হবে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে। অন্তত নির্বাচনের এখন পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফল তাই বলছে।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট গ্রহণ হয়। আর ৬০ আসন সংরক্ষিত নারীদের জন্য ও ১০টি সংরক্ষিত সংখ্যালঘুদের জন্য।
সরকার গঠন করতে যে কোনো দলের অন্তত ১৩৪টি আসনে জয়লাভ করতে হবে।
দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের তথ্যানুযায়ী, ঘোষিত ২১৪টি আসনের মধ্যে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৮৯টি আসনে। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রার্থীরা পেয়েছেন ৫৯টি আসন। পিএমএল-এন থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। ইতোমধ্যে তাদের দখলে গেছে ৫০টি আসন। বাকিদের মধ্যে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) ১১টি, জমিয়ত ওলেমা-ই-ইসলাম পাকিস্তান (জেইউআই-পি) ২টি এবং অন্যান্য দলের প্রার্থীরা পেয়েছেন তিনটি আসন।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৫ আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আর একটি আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
প্রধান তিন দলের মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই-ই জোট সরকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে পাকিস্তানকে। আবার বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও সরকার গঠন করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পিটিআই। কারণ বাকি দুই দল (পিএমএল-এন ও পিপিপি) সমঝোতা করে ফেললে সরকার গঠনের ন্যায্যতা হারাতে পারে দলটি।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তোড়জোড় শুরু করেছেন পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ। নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে জোট সরকার গঠনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ শুরু করেছেন বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
সরকার গঠনে তৎপর নওয়াজ শরিফ
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা ৯০টির বেশি আসনে জিতলেও অনেক পেছনে থাকা পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের শীর্ষ নেতাদের দাবি, তাদের প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েছেন। তাদের দলই কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করবে।
এ বিষয়ে নওয়াজ শরিফ বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, নির্বাচনের পর পিএমএল-এন আজ দেশের একক বৃহত্তম দল।’
পাকিস্তানে চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে দেশকে বের করে আনতে সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং রাজনীতিকদের ইতিবাচক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা পিটিআই নেতাদের
অন্যদিকে, ভোটের ফল ও ভোট-পরবর্তী কৌশল অবলম্বনে কারাবন্দি ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন পিটিআই নেতারা। জিও টিভির কাছে ইমরানের ঘনিষ্ট এক নেতা এ কথা জানিয়েছেন। শনিবার তাদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয়ে ফাঁস সংক্রান্ত মামলায় ইমরান খানের আদালতে শাস্তি হওয়ার পর পিটিআইয়ের নির্বাচনি প্রতীক বাতিল করে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। তার পর স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলটির প্রার্থীরা।
এ পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফলে তারাই ৮৯টি আসন নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ফলাফল পাওয়ার পর পিটিআই জানায়, এবার তারা এককভাবে সরকার গঠন করবে। সরকার গঠনে অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোট গঠন করতে হবে না তাদের।
অন্যদিকে, সামান্য পেছেনে থাকা নওয়াজ শরীফের দল জানিয়েছে, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং জোটে হলেও তারাই সরকার গঠন করবে।
যদিও এখন পর্যন্ত কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত জোটেই সমাধা হতে পারে পাকিস্তানের সরকার গঠন।
আজকের সারাদেশ/১০ফেব্রুয়ারি/এএইচ