দুপুর ২:৩২, শুক্রবার, ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজস্ব প্রয়োজন মেটাতে শিপিং খাতে টিকে গ্রুপের বিনিয়োগ

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:

বছরজুড়ে ভোজ্যতেল আমদানির জন্য সমুদ্রপথে প্রায় ৩২ মিলিয়ন ডলার পরিবহন ব্যয় করতে হয় দেশের ভোগ্যপণ্য এবং শিল্প খাতের অন্যতম জায়ান্ট চট্টগ্রাম-ভিত্তিক টিকে গ্রুপকে। ব্যয় সংকোচন এবং নতুন খাতের বিনিয়োগের অংশ হিসেবে শিপিং খাতে বিনিয়োগ করছে শিল্পগ্রুপটি।

সামুদা শিপিং লিমিটেড নামে একটি পৃথক কোম্পানি খুলে শুরুতে ১৫৭ কোটি টাকা বিনিয়োগে এমটি সামুদা নামে একটি অয়েল অ্যান্ড কেমিক্যাল ট্যাংকার কিনেছে টিকে গ্রুপ। জাহাজটি একসঙ্গে ২৪,০২৫ টন পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এতে ২২ জন নাবিকসহ সর্বমোট ৪০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।

টিকে গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি বছরে শুধুমাত্র ভোজ্যতেল আমদানি করে ৮ লাখ টন। প্রতিটন ভোজ্য তেল আমদানিতে জাহাজ ভাড়া দিতে হয় প্রায় ৪০ ডলার। সেই হিসেবে বছরে ভোজ্যতেল পরিবহনে টিকে গ্রুপের ব্যয় হয় ৩২ মিলিয়ন ডলার। শিল্পগ্রুপটির আমদানি করা শতভাগ ভোজ্যতেল পরিবহন করতে আরো তিনটি অয়েল অ্যান্ড কেমিক্যাল ট্যাংকারের প্রয়োজন। প্রায় ১ লাখ টন পণ্য পরিবহন সক্ষমতার জাহাজ হলে টিকে গ্রুপ নিজেদের জাহাজেই শতভাগ পণ্য পরিবহন করতে পারবে।

সামুদা শিপিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্রুপ পরিচালক মোস্তফা হায়দার বলেন, “শিপিং খাতের লাভ-ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করে জাহাজের বহর বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এমটি সামুদার মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া থেকে ২টি ভয়েজে ২২ হাজার টন করে ৪৪ হাজার টন পাম অয়েল আমদানি করা হয়েছে। প্রতিটন ৪০ ডলার হিসেবে ৪৪ হাজার টন ভোজ্যতেল পরিবহনের ভাড়া বাবাদ ১ লাখ ৭৬ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য পরিবহন হয়েছে। এমটি সামুদা জাহাজ দিয়ে ভোজ্য তেলে আমদানির মোট চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ পরিবহন করা যাবে। আমাদের লক্ষ্য শতভাগ ভোজ্যতেল নিজেদের জাহাজ দিয়ে পরিবহন করা হয়। এই লক্ষ্য পূরণ করতে একই আকারের আরও তিনটি ট্যাংকার প্রয়োজন।”

শুধু ভোজ্য তেলই নয়, ভোগ্য পণ্য, সিমেন্টের কাঁচামালসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানিতে চার্টার ভেসেলের ওপর নির্ভর করতে হয় আমদানিকারকদের। সরকার শিপিং খাতকে এগিয়ে নিতে ফ্ল্যাগ প্রোটেকশন অ্যাক্ট করেছে। ফলে গত চার বছরে এই খাতে অনেক বড় হয়েছে। দেশীয় মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। টিকে গ্রুপও এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা করছে।

বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠান মার্কেন্টাইল মেরিন অফিসের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ জানান, ২০২৪ সালে অন্তত ১৫টি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের নিবন্ধন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি বছর সমুদ্রগামী জাহাজে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে টিকে গ্রুপ। এই শিল্পগোষ্ঠী আরো তিনটি সমুদ্রগামী অয়েল ট্যাংকার ক্রয় করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে চট্টগ্রামের দুই সহোদর মোহাম্মদ আবু তৈয়ব ও মোহাম্মদ আবুল কালামের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয়েছিল ভোগ্যপণ্যের বর্তমান জায়ান্ট টিকে গ্রুপ। তৈয়বের নামের প্রথম অক্ষর ‘টি’ এবং কালামের নামের প্রথম অক্ষর ‘কে’ থেকে তাদের শিল্প গ্রুপের নামকরণ হয় টিকে গ্রুপ। আবুল কালাম ও তার সন্তান মোস্তফা হায়দার এবং প্রয়াত আবু তৈয়বের সন্তানরা এখন টিকে গ্রুপের পুরো ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

ভোজ্যতেল ও চর্বি, ইস্পাত গ্যালভানাইজিং, পার্টিকেল বোর্ড, ভোগ্যপণ্য, চা বাগান, রাসায়নিক খাদ্য ও পানীয়, সিমেন্ট, সফটওয়্যার, পেট্রোকেমিক্যাল, প্যাকেজিং ও কন্টেইনার, চামড়, কাগজ, শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং টেক্সটাইল খাতসহ টিকে গ্রুপের ৩০টির অধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রুপটিতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। গ্রুপটির বার্ষিক টার্নওভার ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।

দেশের শিপিং খাতের সম্প্রসারণ:

মার্কেন্টাইল মেরিন অফিসের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ৯৮টি। জুনে এই সংখ্যা হবে ১০০। কন্টেইনারবাহী জাহাজ কেনায় কয়েকটি নতুন কোম্পানি বিনিয়োগে আসছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী তিনটি জাহাজের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে মার্কেন্টাইল মেরিন অফিস। এরমধ্যে বাল্ক ক্যারিয়ার এমভি আবদুল্লাহ এবং এমভি জাহাজ ব্রাদার্স কবির গ্রুপের মালিকানাধীন। অন্যটি এমটি সামুদা টিকে গ্রুপর মালিকানাধীন।

২০১৮ সালে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৬টি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (সুরক্ষা) আইন হওয়ার পর ক্রমাগত বাড়তে থাকে জাহাজের সংখ্যা। আসতে থাকে নতুন নতুন কোম্পানির বিনিয়োগ।

বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের বহরে রয়েছে- ৭৩টি খোলা পণ্যবাহী বাল্ক ক্যারিয়ার, ৭টি ট্যাংকার, ৬টি অয়েল অ্যান্ড কেমিক্যাল ট্যাংকার, ৩টি গ্যাস ক্যারিয়ার , ৮টি কন্টেইনার এবং ১টি কার্গো কাম কন্টেইনার জাহাজ। আন্তর্জাতিক সমুদ্র পথে চলাচলকারী ১০০টি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ৭টি, বাকিগুলো বেসরকারি অপারেটরদের। এরমধ্যে কবির গ্রুপের রয়েছে ২৪টি জাহাজ, মেঘনা গ্রুপের ২২টি, আকিজ গ্রুপের ১০টি, এইচআর লাইনের ৮টি এবং বসুন্ধরা গ্রুপ ও ভ্যানগার্ড শিপিংয়ের ৬টি করে জাহাজ রয়েছে।

এছাড়াও এমজেএল বাংলাদেশ, ওরিয়ন অয়েল অ্যান্ড শিপিং, বিএসএ শিপিং, এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, দরিয়া শিপিং, হানিফ মেরিটাইম, অ্যাডভান্স শিপিং, পিএনএন শিপিং লাইনস, সানশাইন নেভিগেশন, পিএইচ নেভিগেশন এবং ডোরিন শিপিং লাইনেরও রয়েছে সমুদ্রগামী জাহাজ।

দেশের শিপিং খাতকে এগিয়ে নিতে ২০১৯ সালে ‘বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (সুরক্ষা) আইন-২০১৯’ প্রণয়ন করে সরকার। এই আইনের মাধ্যমে স্থানীয় বন্দরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করে, ৫০ শতাংশ পণ্য স্থানীয় জাহাজে বহন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যা আগে ছিল ৪০ শতাংশ। এছাড়া জাহাজ নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও জটিতলা দূর হয়েছে। আইনে ব্যবসায়ীদের ৫ হাজারের বেশি ডিডব্লিউটি ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

আজকের সারাদেশ/জেএম

সর্বশেষ সংবাদ

যুবদল নেতার মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে

বাবরী মসজিদ ভাঙার পর সম্প্রীতি রক্ষায় লেখা হয় সেই ‘আলোচিত’ গান

নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে মামলা, টাকা নিয়ে মিটমাট করতে বললেন এসআই

কবিতা: স্বাধীনতা।

ভূমি, কার্গো দখল ও ঘর ভাংচুরের ঘটনায় কবিরহাট থানায় মামলা

চবিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ‘মুক্ত সংলাপ’ প্রত্যাখান শিক্ষার্থীদের, ষড়যন্ত্র না করতে দিল হুঁশিয়ারি

১৫ বছর পর মাতৃভূমিতে যুবদল নেতা হাসান নূরী

চবি উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক শামীম অথবা ড. আতিয়ারকে চান শিক্ষার্থীরা

ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার দায় নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন পলক

কোপা আমেরিকার সেরা একাদশে ৫ জনই আর্জেন্টিনার, ব্রাজিলের এক