আজকের সারাদেশ রিপোর্ট:
যৌতুকের দবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে এসে এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী র্যাব সদস্য মেহেদী হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় র্যাব-১ কর্মরত পুলিশের ওই উপপরিদর্শককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তবে ভুক্তভোগীর আইনজীবীর দাবি, বনিবনা না হওয়া ডিভোর্স দেওয়ায় তার মক্কেলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করানর উদ্দেশ্যে এই মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক কামরুন নাহার রুমি এ আদেশে দেন।
র্যাব-১ এর উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান চৌধুরী কুমিল্লার লাঙ্গলকোট থানার পূর্ব জোদ্দা এলাকার বাসিন্দা। অন্যদিকে ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজা বিভাগের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লার কোতোয়ালি থানা এলাকার বাসিন্দা।
কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক জাকির হোসাইন মাহমুদ।
মামলার নথিপত্রে উল্লেখ্য করা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর সাথে ২০২১ সালের ২ জুলাই পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় মেহেদীর। শুরুতে বিয়ের আগেরদিন মেহেদী ওই শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে হলুদের খরচ বাবদ জোরপূর্বক ৪৫ হাজার টাকা যৌতুক আদায় করে। বিয়ের ১১ দিন পর মেহেদীর সাথে একাধিক নারীর অনৈতিক সম্পর্কের কথা জানতে পারেন ভুক্তভোগী। বিষয়টি সম্পর্কে স্বামীর কাছে জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ হয়ে ভুক্তভোগীকে মারধর করেন তিনি। পরবর্তীতে গাড়ি কেনার কথা বলে বাবার বাড়ি থেকে ১০ লাখ টাকা যৌতুক এনে দেয়ার জন্য চাপ দেন। যৌতুক এনে দিতে অস্বীকার করলে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন মেহেদী। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার শালিসি বৈঠক হলেও আসামি ও তার পরিবার শালিসের সিদ্ধান্ত অমান্য করে।
অভিযোগ উঠেছে— সর্বশেষ গত বছরের ২ ডিসেম্বর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের একাধিক কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করলেও আসামি ও তার পরিবার মেনে নেয়নি। এরপর ওই ছাত্রী ফাইনাল পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে আবাসিক হলে উঠেন। এরমধ্যে ১৯ ডিসেম্বর আসামি মেহেদী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ছাত্রীর বিভাগের অফিসে গিয়ে কর্তব্যরত কর্মকর্তাকে তার বিরুদ্ধে নানা মানহানিকর কথাবার্তা বলে স্টুডেন্ট ফাইল সংগ্রহের চেষ্টা করে। ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে ভুক্তভোগীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশের রাস্তায় ডেকে নেন। এসময় বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা না দেয়ার কারণ জানতে চেয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীর তলপেটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কিল, ঘুষি ও পা দিয়ে আঘাত করে। এসময় তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন তিনি।
আসামির বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ— মারধরের সময় আসামি মেহেদী গাড়ি কিনে দেয়ার ব্যবস্থা না করলে আবার এসে অপহরণ করে খুন ও পরবর্তীতে লাশ গুম করার হুমকি দেন। ঢাকার কর্মস্থলে উপস্থিত দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে খুন করলে আইনত তাকে দোষী করা যাবে না বলে চিৎকার করতে থাকেন তিনি। এসময় ওই ছাত্রীর পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়ারও হুমকী দেন তিনি।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুবাইদা সরওয়ার চৌধুরী নিপা বলেন, ‘যৌতুকের অর্থ না পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে ওই ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগে তিনি ১৩ জানুয়ারি হাটহাজারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আজ আসামি মেহেদী হাসান চৌধুরী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আমরা এর বিরোধিতা করি৷ আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’
তবে বাদীর আইনজীবী মোকাররম হোসাইনের দাবি ডিভোর্স দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মেহেদী হাসানকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করাতেই এই মামলা করেছেন বাদী। তিনি বলেন, ‘সাংসারিক বনিবনা না হওয়ায় গত ২৭ সেপ্টেম্বরেই মেহেদী হাসান তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেন, সেটা তিনি ১৯ ডিসেম্বর গ্রহণ করেন। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হলে তাদের অব্যহতি দেয়া হয়, তাই ডিভোর্স দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মেহেদীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করাতেই মামলাটি করেছেন ওনি। যৌতুকের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিষয়টা সত্যি হলে তো ওনি ডিভোর্সের আগেই মামলা করতে পারতেন।’