সাইফুল আফ্রিদি, কক্সবাজার:
প্রখর সূর্যতাপে স্কুল প্রাঙ্গণে খেলতে পারত না শিশুরা। গরমের সময় একটু বিশ্রাম নেবে-সেই সুযোগও মিলত না। শিশুরা পড়বে-খেলবে, এমন ধারণাকে সামনে রেখে ২০টি মেহগনি গাছ লাগানো হয়েছিলো বিদ্যালয় প্রাঙ্গন সীমানায়।
২০ বছর আগে লাগানো গাছগুলো এখন ছায়া দিতে শুরু করেছে। শোভা বর্ধন করছে স্কুল প্রাঙ্গনেরও। গাছগুলোর ছায়ার নিচে হাঁটতে হাঁটতে তাই মন ভরে উঠত সবার।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সেই প্রিয় গাছগুলোকেই কিনা রাতের আঁধারে করাত চালিয়ে মাটিতে শুয়ে দেয়া হয়েছে। ফেলা রাখা হয়েছে জীবন্ত ডালপালাযুক্ত গাছগুলোকে। গত রাত থেকে পড়ে আছে গাছগুলো। তবে কেউ স্বীকার করছেন না কারা এ কাজ করেছেন। গাছের সঙ্গে শত্রুতা নাকি গাছ মালিকের ক্ষতি করতেই গাছ হত্যা-সেটির উত্তরও মেলেনি। স্থানীয় কয়েকজন নাম বলতে চেয়েও বলেননি ভয়ে।
এই ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের চিকনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে। মধ্য রাতে নির্বিচারে কাটা হয়েছে স্কুলের সীমানালগ্ন একে একে ১৫টি মেহগনি গাছ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। গাছগুলো লাগিয়েছিলেন স্থানীয় মনিরুল আলম।
সেই গাছ কেটে ফেলায় মর্মাহত মনিরুল। তিনি বলেন, ‘কিছু বখাটে ছেলে এ গাছগুলো কেটে খেলার মাঠ বানাতে চায়। বখাটেদের আড্ডাখানা বানাতে চায়। কিছুদিন পূর্বে ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম ফুটবল খেলার মাঠের জন্য গাছগুলো কেটে ফেলতে বলেন। আমি তাকে বলেছি স্কুলের জায়গার মাঠেই খেলুক।এ মাঠ মসজিদের জন্য দান করা। স্কুলের মাঠ ও মসজিদের মাঠ দুটোই আমার বাবা দান করেছেন। তারা ওই জায়গা আর স্কুলের মাঠ দুটিকে এক করে বখাটেদের আড্ডার জায়গা বানাতে চায়। সেটি হলে মাঠের পূর্ব পাশে স্কুল আর পশ্চিম পাশে মসজিদের কোনো পবিত্রতা বা পরিবেশই থাকবে না।’
তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে স্পষ্ট নাম বললে বড় কোন ক্ষতি বা প্রাণনাশের আশঙ্কা করছেন তিনি। ফলে তাদের নাম মুখে আনেননি তিনি। তবে এ বিষয়ে তিনি প্রশাসন ও স্থানীয় চেয়ারম্যান তারেক শরীফকে অবহিত করেছেন বলে জানান।
চিকনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটা সময় পড়েছেন মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেওয়া ড. আব্দুল আজিজ। গাছ কাটার খবরে স্কুলের এই প্রাক্তন মেধাবী ছাত্রের মনও কাঁদছে। শোকের সব শব্দকে একজোট করে ড. আব্দুল আজিজ ফেসবুকে লিখেছেন,’আমি এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী। গাছ কেটে ফেলার এই দৃশ্য দেখে আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও আহত বোধ করছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বেড়ে উঠা ২৫ টির মতো মেহগনি গাছ রাতে কেটে ফেলেছে। করাতের আঘাতে পড়া থাকা দীর্ঘকায় গাছে ঢেকে আছে পুরা খেলার মাঠ। এভাবে রাতের অন্ধকারে অসংখ্য গাছ কেটে জোর করে দখল করর চেষ্টা স্থানীয় লোকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।’
ড. আজিজ এই বিষয়ে পরিবেশকর্মী, সাংবাদিক , স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ এবং আইনি সহায়তা কামনা করেন।
শুধু ড. আজিজ নন, গাছগুলো কাটায় স্কুলের সাবেক-বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকের মধ্যে ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল আর মাসজিদ মাঠের মধ্য সীমানায় মেহগনি গাছগুলো। মাঠটি পূর্ব পশ্চিমমুখী। মাঝখান থেকে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়। কারা কেটেছে জানতে চাইলে স্থানীয়রা নাম মুখে আনতে চায়নি। তবে কিছু ব্যক্তি জায়গাটি দখল করতে বখাটেদের দিয়ে গাছগুলো কাটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জমির মালিক।
অবশ্য গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম। তিনি বলেন,গাছগুলো রাতের আঁধারে কারা কেটেছে তিনি জানেন না। কিছুদিন পূর্বে জায়গার মালিক মনিরুল আলমকে গাছ কেটে ফেলতে বলা কথাটিও অস্বীকার করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মঞ্জুর আলম বলেন, স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির ইন্ধনে বখাটেরা গাছগুলো কেটেছে। এভাবে গাছ কেটে ফেলা আমাদের জীবনের জন্য হুমকি। আজকে গাছ কাটলো কালকে আমাদেরও ক্ষতি করতে পারে তাঁরা।
আজকের সারাদেশ/২৭ মে/এসএম